পয়লা বৈশাখে মঙ্গলশোভার বিরোধীদের অনেককেই প্রশ্ন করতে দেখলাম, নাস্তিক হয়েও কিভাবে এসব মঙ্গল শোভাযাত্রায় নাস্তিকরা অংশ নেয়!
"যারা স্রষ্টাকে অবিশ্বাস করে তারাই আবার মঙ্গল শোভাযাত্রা করে বেড়াচ্ছে"!
মঙ্গল শোভাযাত্রা, ১ বৈশাখ ১৪৩১ |
স্রষ্টাকে বিশ্বাস - অবিশ্বাসের সাথে মঙ্গল শোভাযাত্রার সম্পর্ক কী আসলে? একটা র্যালি, সমাবেশ, রঙ বেরঙের আনন্দ উদযাপন - এগুলোতে যেকোন বিশ্বাসের মানুষ অনায়াসে শামিল হতে পারে। একটা বাচ্চা যখন একটা খেলনা প্রতিকৃতি নিয়ে বা মুখোশ নিয়ে বা বেলুন নিয়ে লাফঝাপ করে - সেখানে আনন্দটাই কি মুখ্য থাকে না? নাকি এসব প্রতিকৃতির মাধ্যমে কি মানে করা হচ্ছে, এগুলোতে কার কি বিশ্বাস - সেগুলো মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়? বিষয়টা এমনই। এই যে হাজার বা হাজার, বা লাখ খানেক লোক এই আনন্দে, মঙ্গল শোভাযাত্রায় শামিল হয়েছে, তারা সবাই হিন্দু না, সবাই নাস্তিক না, সবাই কম ঈমানের মুসলমানও না! তারা সেই আনন্দে শামিল হতেই গিয়েছে, গিয়ে কেউ নিজের বিশ্বাস বা ধর্মকে জলাঞ্জলিও দেয় নাই!
এখন, আপনি যদি বলেন - মঙ্গল শোভাযাত্রা মানে তো মঙ্গল কামনা করা, ফলে মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেয়া মানে মঙ্গলই কামনা করা (বস্তুত বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীরই সম্ভবত এইসব মঙ্গল কামনা নিয়া কোন হেডেক নাই), সেইটা যদি ধরেও নেই, তাতেও কোন অসুবিধা নাই। একজন ঈমানদার মুসলমান এই মঙ্গল কামনা করবে - আল্লাহর কাছে, হিন্দু করবে ভগবানের কাছে, খৃস্টান করবে গডের কাছে। অসুবিধা তো নাই!
আর একজন নাস্তিক কার কাছে মঙ্গল কামনা করবে? এই বিষয়টা একজন বিশ্বাসী মানুষের পক্ষে অনুধাবন করা কঠিন, কেননা তারা এমন মঙ্গল কামনা, চাওয়া - এর মানেই মনে করে, সেখানে অতিপ্রাকৃত কোন শক্তি, দেবতা, ঈশ্বর, আল্লাহ- এরকম কারোর কাছে কামনা করা বা চাওয়া। অন্যদিকে নাস্তিক মাত্রই মনে করে- ঈশ্বর - আল্লাহ বা অতিপ্রাকৃত এমন শক্তির অস্তিত্বই নাই, ফলে সেসবের কাছে কিছু কামনা করা অনর্থক। তার মানে এই না যে, তারা কোন কিছু কামনা করে না, কারোর ভালো চায় না, জগতটা সুন্দর হোক এমন চায় না! যেকোন মানুষের মত একজন নাস্তিকও ভালো কিছু চাইতে পারে, প্রত্যাশা করে, খারাপ কিছু যাতে না হয় - তেমন কামনাও করে। যেমনঃ একজন নাস্তিক তার অসুস্থ বন্ধুকে দেখে বলে, দ্রুত সুস্থ হয়ে যাও, বা কাউকে বলে ভালো থেকো (আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দেন, ভগবান তোমার ভালো করুন - এসব বলে না), সেই চাওয়ার অর্থ হচ্ছে - একটা সুন্দর বা ভালো কিছুর প্রত্যাশা করা। এই যে ভালো ভবিষ্যতের প্রত্যাশা বা কামনা কিংবা মঙ্গল কামনা - এসব যেহেতু কোন ঈশ্বর - ভগবান - আল্লাহর কর্ম না বলে তারা মনে করে, সেহেতু নাস্তিকদের এরকম মঙ্গল কামনা, তথা ভালো ভবিষ্যতের প্রত্যাশার সাথে সাথে এটাও মনে করে- সেটা বস্তুত মানুষেরই কাজ। মানে, ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে গেলে - মানুষকেই প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। ফলে, একজন নাস্তিক যখন মঙ্গল কামনা করে - সেটার সাথেই মিশে থাকে, সেই ভালো হওয়ার জন্যে মানুষের প্রত্যক্ষ উদ্যোগ। উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, নাস্তিক যখন কামনা করে - দুনিয়ায় শান্তি আসুক, যুদ্ধ বন্ধ হোক, বা বাংলাদেশের মানুষের অভাব, দুঃখ কষ্ট সব লাঘব হয়ে যাক - তখন সেটার অর্থই হচ্ছে, কোন আল্লাহ - ভগবান - গড এসে এসব করে দিয়ে যাবে, সেইটা না (কেননা তারা মনে করে আল্লাহ - ভগবান - গডের সেই সামর্থ্যই নাই), বরং তারা আশা করে, মানুষই দুনিয়াতে শান্তি আনতে ভূমিকা রাখবে, দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে মারামারি - হানাহানি - যুদ্ধ বন্ধ করবে। একজন নাস্তিক যখন বলে, "মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা", তার মানে সে বুঝে মানুষের মাঝে যেসব কারণে গ্লানি, জরা এসে জমা হয়, সেই কারণগুলো দূর করতে মানুষ ভূমিকা রাখুক! বিষয়টা এমনই!
সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। একই সাথে বৈসাবি, বৈসু বা বাইসু, বিজু, সাংগ্রাই -এরও শুভেচ্ছা।
ফেসবুক হতে।