বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

কোরবানির ইতিহাসঃ বাইবেল ও কোরআনের বিরোধ

এক
কোরবানির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কিত বাইবেল ও কোরআন এর আলাপ লইয়া ইসলামপন্থী, ইসলামবাদী, ইসলামিক বুদ্ধি-জীবীদের ভিতর ইদানিং বহুত কথাবার্তা হইতেছে! খুবই উপাদেয় আলাপ-আলোচনা, ফলে সমূহ পুলক বোধ হইতেছে, হাসিও আসিতেছে! উহারা প্রধানত দুইটি বিষয়ের দিকে উনাদের দৃষ্টিনিবন্ধ করিয়াছেনঃ
প্রথমত - বাইবেলে আব্রাহাম পুত্র ইসহাককে কোরবানির কথা বলা হইলেও, কোরআনে কোন পুত্রের কথাই নাম ধরিয়া বলা হয় নাই, যদিও বর্তমানে মুসলমান বয়ানে ইসমাইলকে কোরবানির কথাই বহুল প্রচলিত ও সর্বজনস্বীকৃত। 
 
দ্বিতীয়ত - বাইবেলে ঈশ্বর সরাসরি আব্রাহামকে ডাকিয়া প্রাণপ্রিয় সন্তানকে বলিদান করিবার নির্দেশ ফর্মাইয়াছিলেন এবং আব্রাহাম সেই মোতাবেক পুত্র সন্তানকে বলিদানে উদ্যত হইয়াছিলেন, অর্থাৎ পুত্রের কোন মত পিতা লন নাই। অন্যদিকে, কোরআনে ইব্রাহীম নবী স্বপ্নে দেখিয়াছিলেন তিনি তার সন্তানকে জবেহ করিতেছেন, তাহা সন্তানকে জানিয়েছিলেন এবং সন্তান স্বয়ং রাজি হইয়াছিলেন।
 
 
দুই 
ইব্রাহীম নবী তাঁহার কোন সন্তানকে কোরবানি দিতে উদ্যত হইয়াছিলেন, তাহা সেই সন্তান এবং তাঁহার বংশধরদিগের জন্যে বিশেষ গর্বের হিসাবে গণ্য হইতেছে বলিয়াই ইসহাকের বংশধর হিসাবে পরিচিতি দেওয়া ইহুদী ও খৃস্টানরা ইসহাকের নাম নিতেছেন, এবং ইসমাইলের বংশধর হিসাবে পরিচিতি দেওয়া মুসলমানরা ইসমাইলের নাম নিতেছেন! কিন্তু, সমস্যা হইয়া গিয়াছে যে, কোরআনে কোন সন্তানের নাম মুহাম্মাদ (সা) নিতে পারেন নাই, বা সাহস করেন নাই! জানা যাইতেছে যে, ইবনে কাথিরের পূর্বের ইসলামি আলোচনাসমূহে ইসহাকের কথাও বলা হইয়াছে। ইবনে কাথির ও তদপরবর্তী ইসলামিক আলেমগণ ও তাফসিরকারীগণ যাহারা বলিতেছেন ইসমাইলই আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজে জান কোরবানি দিতে প্রস্তুত ছিলেন, তাহারা জানাইতেছেন পূর্বের আলেমগণ ভুলক্রমে ইহুদীদিগের প্ররোচণায় ইসহাকের নাম উল্লেখ করিয়া ফেলিয়াছিলেন! কিন্তু, কেন কোরআনে আল্লাহ পাক কিংবা নবীজী ইসমাইলের নাম উল্লেখ করিলেন না, আল্লামা তাবারি, আল্লামা কুরতুবি, আল্লামা কুরতুবির উল্লেখিত হযরত আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হযরত আলি, হযরত উমর এবং আব্দুল্লাহ ইবনে উমর প্রমুখ - সকলেই কেন ইসহাকের নাম লহিয়াছিলেন এবং তাহাঁরা কিভাবে ইহুদীদিগের মারফৎ প্ররোচিত হইয়াছিলেন, বিভ্রান্তিতে পড়িয়াছিলেন, সেই সম্পর্কে কেহই আলোকপাত করিতে পারিতেছেন না! এবং এই সন্তান যে ইসহাক নহে, তিনি ইসমাইলই - ইহার পক্ষে অন্য কোন শক্ত যুক্তিও পাওয়া যাইতেছে না, একমাত্র যুক্তিই হইতেছে পূর্বতন যাহারা ইসহাকের নাম লহিয়াছিলেন - সকলেই ইহুদীদিগের দ্বারা প্ররোচিত হইয়াছিলেন! নবীজী মুহাম্মাদ (সা) এর কুরায়েশ বংশ যে ইসমাইলের বংশধর (বনু ইসমাইল), সেই হিসাবে ইসমাইলের উপরে এই বিশেষ মর্যাদা প্রদান করা হইলে, নবীজী (সা) এবং তাহাঁর উম্মতসকল বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত হইবেন, সেই আকাঙ্খা হইতেই যে ইসহাকের বদলে ইসমাইলকে কোরবানি দেওয়ার জন্যে ইব্রাহীম নবী উদ্যত হইয়াছিলেন - এইভাবে মিথটিকে পুনরুৎপাদন করা হইয়াছিলো, তাহা কেহ গোপন করিতে পারিতেছেন না! কিন্তু, ইহুদীদিগের প্ররোচনায় পূর্বতন সাহাবী ও আলেমগণ ইসহাকের নাম লইতেন, এহেন আলোচনায় এই কথা মনে করিয়া আমার ভীষণ হাসি পাইতেছে যে, স্বয়ং রাসুলে করিম হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ইহুদীদিগের দ্বারা প্ররোচিত হইয়া, তথা ইহুদী - খৃস্টানদের মাধ্যমে প্রচলিত এই মিথটি শুনিয়াই তাহা কোরআনে ঈষৎ পরিবর্তিত করিয়া ঢুকাইয়া দিয়াছিলেন! অর্থাৎ, কোরআনে থাকা কোরবানির সমগ্র আলোচনাই তো ইহুদীদিগের প্ররোচনার ফল (সাহাবা ও অন্যান্য আলেমগণ ইহুদীদিগের দ্বারা প্ররোচিত হইতে পারিলে, নবীজী পারিবেন না কেন?)!
 
 
তিন 
দ্বিতীয় প্রসঙ্গটি বা তুলনাটি আরো চমকপ্রদ। ইশ্বর পিতাকে আদেশ দিলেন, তোমার সন্তানকে বলিদান করো। আর অমনি পাষণ্ড ও উন্মাদ পিতা চলিলেন নিজ সন্তানকে জবেহ করিতে! আর এইদিকে পিতা স্বপ্ন দেখিলেন, তিনি নিজ সন্তানকে জবেহ করিতেছেন! প্রাণপ্রিয় সন্তান দূরের কথা, সন্তানের সহিত খুব তিক্ত সম্পর্ক থাকিলেও তো এমন বীভৎস স্বপ্ন দেখিয়া ভয়ে কুকড়ে গিয়া সন্তানকে জড়াইয়া ধরিবার কথা! আর, সেইখানে এই উন্মাদ পিতা তাহাঁর সন্তানকে স্বপ্নের কথা এমনভাবে জানাইতেছেন যে, উন্মাদ সন্তান নিজেও রাজি হইয়া যাইতেছেন - নিজের জীবনকে পিতার হাতে উৎসর্গ করিয়া দিতে! দুই মিথেই দুই বদ্ধউন্মাদ পিতাকে আমরা পাই, যাহাকে আসলে পাগলাগারদে আটকে রাখা উচিৎ ছিলো! সেইখানে, এনারা আলোচনা করিতেছেন, কোরআনের এই গল্পের পিতা কত মহান, কত গণতান্ত্রিক যে, সন্তানকে তাহা জানাইয়াছিলেন, এবং সন্তানও কত মহান, কত সাহসী ও নির্ভিক যে পিতার আহবানে সাড়া দিয়াছিলেন। ইহা বড়ই মজার বিষয় যে, বাইবেলের এক বদ্ধ উন্মাদের স্থলে কোরআনে দুই বদ্ধ উন্মাদ পাওয়া গেল, এবং তাহাতে মুহম্মদ (সা) এর উম্মতদের ছাতি অনেক বাড়িয়া গেল!

কোন মন্তব্য নেই: