মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০০৮

ডিম্বের সন্ধান এবং রাশাদ খলীফা ও তার ম্যাথমিটিকল মিরাকল অব কোরআন তত্ত্ব

একঃ ডিম্বের সন্ধানে
 
আমার আগের প্রবন্ধ "ধর্মে বিজ্ঞানঃ নিম গাছে আমের সন্ধান" এর একখানে উল্লেখ করিয়াছিলাম, "আফসোস তৈরী হয়, নিজ হাতে লেখার পরেও কেন আল্লাহ গোটা কোরআনে একবারো সরাসরি উল্লেখ করতে পারলেন না যে পৃথিবী গোলাকার"।
 
হঠাৎই সেইদিন একবিজ্ঞজনের আলোচনায় দেখিলাম তিনি সদর্পে ঘোষণা করিয়াছেন যে, "মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন কোরআন মাজীদে পৃথিবীর ‘গোলাকার’ আকৃতি এরশাদ করিয়াছেন”। আমার তো ভীমিড়ি খাইবার দশা, হায়! হায়! ইহা তিনি কি বলিতেছেন। চক্ষু রগড়াইয়া দেখিলাম আল্লাহ পাকের সেই বানীঃ 
"And we have made the earth egg shaped".[Al-Qur’an 79:30]
 
যাহার মানে দাঁড়াইতেছে পৃথবীকে আল্লাহ পাক ডিম্বাকৃতির করিয়া বানাইয়াছেন!
 
এ যাবৎ আমার দেখা সকল ডিম্বই দুইদিকে সুচালাকৃতির হইলেও, ভাবিলাম 'ডিম্বাকৃতির পৃথিবী' 'সমতল পৃথিবী'র তুলনায় অধিক গোলাকৃতির হইবার সম্ভাবনা প্রবল। সুতরাং, কাল বিলম্ব না করিয়া আমার সেই প্রবন্ধখানির জন্য নাকে খত দিবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা আরম্ভ করি। যদিও আমি কোরআন মাজীদের কয়েকখানি অনুবাদ আদ্যপান্ত পাঠ করিয়াই উপরিউক্ত সিদ্ধান্ত জানাইয়াছিলাম, তথাপি বিশালাকায় কোরআন পাক পাঠকালে উক্ত আয়াত হয়তোবা কোন কুক্ষণে আমার দৃষ্টির আড়ালে চলিয়া গিয়াছিল ইহা ভাবিয়া মনে বড়ই ক্লেশ অনুভব করিতেছিলাম।
 
তো, আমার সেই প্রবন্ধখানিতে আমার এই বক্তব্য তুলিয়া নিবার ও করজোরে ক্ষমা প্রার্থণার উদ্দেশ্যে যাইতেছিলাম। ইত্যবসরে কি মনে করিয়া জহুরুল হক সাহেবের অনুবাদখানি খুলিয়া দেখিলাম। ৭৯ নম্বর সুরা। সুরা আন নাযিয়াত। ৩০ নম্বর আয়াত। এইবার আবারো ভীমড়ি খাইবার দশা। অনুবাদে ডিম্ব খুঁজিয়া পাইলাম না। অনুবাদে যাহা পাইলাম তাহা এইরূপঃ "আর পৃথিবী- এর পরে তাকে প্রসারিত করেছেন"। ভাবিবালাম, কেবলমাত্র জহুরুল সাহেবের অনুবাদের উপর নির্ভর করা ঠিক হইবে না। অন্য অনুবাদের খবর লইতে হইবে। ঢুকিলাম ইসলামী সাইট কোরআনা শরীফ ডট অর্গে (1)। সেইখানেও দেখি অনুবাদ করা হইয়াছে এইরূপে:
"পৃথিবীকে এরপরে তিনি বিস্তৃত করেছেন"
"And after that He spread the earth "
 
তথাপি মন ভরিলো না। ভাবিলাম, বিজ্ঞজন যেহেতু বলিয়াছেন সেহেতু নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও ডিম্ব পাওয়া যাইবেই যাইবে। তাই খুঁজিতে থাকিলাম। এবার আরেকটি সাইটে (2) খোঁজ লাগাইলাম। সেইখানেও দেখি :
YUSUFALI: "And the earth, moreover, hath He extended (to a wide expanse)"
PICKTHAL: "And after that He spread the earth"
SHAKIR: "And the earth, He expanded it after that"
 
কিছুখানি দমিয়া যাইলেও হতাশ হইলাম না, কেননা ইহার মধ্যেই ডিম্ব খুঁজিয়া পাইবার দুর্বার আকাঙ্খা আমার মধ্যে বাসা বাঁধিয়াছে। প্রথমে ভাবিলাম, সেই বিজ্ঞজনের শরনাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কর্ম হইবে। ওনাকে বিস্তারিত জানাইলে তিনি সদয় হইয়া আমাকে একখানি সাইটের লিংক (http://www.irf.net/irf/dtp/dawah_tech/t15/t15b/pg1.htm) দিলেন। খুশীমনে সেইখানে ঢুকিয়া দেখিলাম তাহা কোরআন শরীফের অনুবাদমূলক সাইট নহে, বরং কোরআনকে নিয়া বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবমূলক সাইট। সেইখানে অবশ্য ডিম্ব সংক্রান্ত একখানা আলোচনা পাইলাম। একই ধরণের আলোচনা পরবর্তীতে আরেক বিজ্ঞজনের একখানি আলোচনাতেও দেখিলাম যাহা মহাগুরু জাকির নায়েক সাহেবের আলোচনা হইতে অনুবাদকৃত। তাহাই এইখানে তুলিয়া দেওয়া সকলের জন্য সুবিধাজনক হইতে পারে:
ذَلِكَ دَحَاهَاوَالْأَرْضَ بَعْدَ
"And we have made the earth egg shaped" [Al-Qur'an 79:30]
"এবং আমি পৃথিবীকে তৈরী করেছি ডিম্বাকৃতিতে।" (আল কুরআন - ৭৯ : ৩০)
 
এখানে লক্ষ্য করার মতো বিষয় : প্রদত্ত আয়াতে আরবী শব্দ دَحَاهَا ( দাহাহা) মানে ডিম্বাকৃতি। ইহা বর্ধিত হওয়াকেও বুঝায়। دَحَاهَا ( দাহাহা) শব্দটা এসেছে "দুহিয়া" থেকে যার অর্থ বিশেষভাবে অস্ট্রিচ পাখির ডিম যেটা geospherical সাইজের, ঠিক পৃথিবীর আকৃতির মতো"।
 
অবশেষে ডিম্বের সন্ধান পাইয়া কিছুখানি আস্বস্ত হইলেও একেবারে নির্ভার হইতে পারিলাম না। মাথায় প্রশ্ন আসিয়া বড়ই ক্লেশ তৈরী করিতে লাগিলো: دَحَاهَا অর্থ যদি ডিম্বাকৃতিই হইবে তবে কেনবা সকল অনুবাদে (এই পর্যন্ত ১১ জন কৃত অনুবাদ দেখিয়াছি, আরো দেখিতেছি..) বিস্তৃত, spread, extended, wide expanse প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হইলো?তাই ভাবিলাম এইবারে دَحَاهَا শব্দ খানি দেখা যাউক। যেইভাবা সেই কাজ। ড. ফজলুর রহমান সাহেবের বাংলা-আরবী অভিধানে দেখিলাম, বাংলা একাডেমির অভিধানেও দেখিলাম এবং সর্বশেষে নেটেও কয়েকখানা অনলাইন ডিকশনারি সাইটে দেখিলাম। সর্বত্রই পাইলাম এইরূপ অর্থ:
دَحَا অর্থ বিস্তৃত, spread, extended প্রভৃতি অর্থসমূহ। আর هَا অর্থ এই, এটি বা This। দুঃখের সহিত লক্ষ করিলাম যে, কোথাও কোন রূপ ডিম্ব পাওয়া যাইতেছে না। দুহিয়া শব্দটিও খোঁজার চেষ্টা করিলাম, উল্টোদিকে উটপাখির ডিম্ব, ডিম্ব, ডিম্বাকৃতি, উটপাখি প্রভৃ্তি শব্দসমূহের আরবী প্রতিশব্দও খুঁজিয়াও কোথাও دَحَاهَا বা "দুহিয়া" পাইলাম না। মন ভাঙিয়া যাইবার দশা যখন দেখিলাম (3) ডিম্বের আরবী بيضة, بييصة, شخص متساهل এইসকল শব্দ। দেখিলাম ডিম্বাকৃতির আরবী بيضاوي । দেখিলাম উটপাখির আরবী نعامة, النعامة من يحاول إجتناب الخطر برفض مواجهته ।
 
ব্যর্থ মনোরথে হাল ছাড়িয়া দেওয়ার আগে শেষ চেষ্টা চালাইলাম। তাফসীর দেখিলাম। সমস্ত মুসলিম বিশ্বে শ্রদ্ধার পাত্র Ibn Kathir এর কোরআন তাফসীর (4) দেখিতে লাগিলাম। যাহা পাইলাম তাহা এইরূপ:
"Then Allah says,
[وَالاٌّرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَـهَا ]
(And after that He spread the earth,) He explains this statement by the statement that follows it,
[أَخْرَجَ مِنْهَا مَآءَهَا وَمَرْعَـهَا ]
(And brought forth therefrom its water and its pasture.) It already has been mentioned previously in Surat Ha Mim As-Sajdah that the earth was created before the heaven was created, but it was only spread out after the creation of the heaven. This means that He brought out what was in it with a forceful action. This is the meaning of what was said by Ibn `Abbas and others, and it was the explanation preferred by Ibn Jarir. In reference to the statement of Allah,
[وَالْجِبَالَ أَرْسَـهَا ]
(And the mountains He has fixed firmly,) meaning, He settled them, made them firm, and established them in their places. And He is the Most Wise, the All-Knowing. He is Most Kind to His creation, Most Merciful. Allah then says,
[مَتَـعاً لَّكُمْ وَلاًّنْعَـمِكُمْ ]
(As provision and benefit for you and your cattle.) meaning, He spread out the earth, caused its springs to gush forth, brought forth its hidden benefits, caused its rivers to flow, and caused its vegetation, trees, and fruits to grow. He also made its mountains firm so that it (the earth) would be calmly settled with its dwellers, and He stabilized its dwelling places. All of this is a means of beneficial enjoyment for His creatures (mankind) providing them of what cattle they need, which they eat and ride upon. He has granted them these beneficial things for the period that they need them, in this worldly abode, until the end of time and the expiration of this life."
 
এইবারে ভাবিলাম, থাক আর কাজ নেই। এত খুঁজিয়াও যেহেতু ডিম্বের খোঁজ মিলিতেছে না, তবে আমার বরাতে সম্ভবত ডিম্ব নাই। কিন্তু দুই দুই জন বিজ্ঞ মহাশয় এবং মহাগুরু জাকির নায়েকের কথাও বা অবিশ্বাস করি কেমনে? শেষে তাই ভাবিলাম, ওনারাও সম্ভবত বেঠিক কিছু বলেন নাই। আসলেই কোরআনে উক্ত আয়াতে ডিম্বের কথা বলা হইয়াছে। তবে তাহা হয়তোবা উটপাখির নহে, অশ্বের হইবার সম্ভাবনাই অত্যাধিক।
 
 
দুইঃ রাশাদ খলীফা, ম্যাথমেটিকল মিরাকল অব কোরআন এবং কোরআন টেম্পারিং
গত কয়েকদিন ডিম্ব খুঁজতে খুঁজতে অবস্থা একেবারে কেরোসিন। শেষে তো হাল প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম।
কিন্তু পুরো ছাড়িনি।তার ফলও পেলাম হাতেনাতে।
 
অবশেষে ডিম্ব পেলাম। অশ্ব ডিম্ব নয়, একেবারে উটের ডিম্ব। এখান থেকেই دَحَاهَا অর্থ যে ডিম্বাকৃতির তা সকলে প্রথম জানতে পারে।লিংকটি হচ্ছে সাবমিশন ডট অর্গের (5), আরবী থেকে ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন রাশাদ খলীফা। অনুবাদটি আগে দেখে নিই:
[79:30] He made the earth egg-shaped.
এবং শেষে স্পেশাল নোটও আছেঃ
79:30 The Arabic word “dahhaahaa” is derived from “Dahhyah” which means “egg”.
 
অবশেষে ডিম্বের সন্ধান পেয়ে আমি তো যারপরনাই খুশী। এবং এই রাশাদ খলীফার প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞবোধ করতে থাকি। সেই কৃতজ্ঞতাবোধের জায়গা থেকেই তাঁর প্রতি উৎসাহী হয়ে উঠি এবং ওনার সম্পর্কে খোঁজ শুরু করে দেই।
 
রাশাদ খালীফাঃ
তিনি মূলত একজন বায়োকেমিস্ট ছিলেন। মিশরে জন্ম হলেও ১৯৫৯ সালে আমেরিকায় বায়োকেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করতে যান এবং সেখানেই থেকে যান। তিনি ইউনাইটেড সাবমিটার ইন্টারন্যাশনাল (USI) নামে গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন, যারা নিজেদেরকে প্রকৃত ইসলামের অনুসারী বলে দাবী করতো। এই গ্রুপ কখনো ইসলাম শব্দ ব্যবহার করেনি, বদলে ব্যবহার করে সাবমিশন এবং মুসলিমের বদলে ব্যবহার করে সাবমিটার। (6)
 
ম্যাথমেটিকল মিরাকল অব কোরআন এর জনকঃ
রাশাদ খলীফা ১৯৭৪ সালে তার বিখ্যাত ম্যাথমেটিকল মিরাকল অব কোরআন প্রকাশ করেন। এই তত্ত্বের মূলে আছে একটি সংখ্যা ১৯। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এ আছে ১৯ টি অক্ষর, মোট সুরার সংখ্যা ১১৪ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য, আয়াতের সংখ্যা ৬৩৪৬ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য, মোট অক্ষর ১৬২১৪৬ যাও ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এমন আরো বিশাল একটি তালিকা তিনি বের করেন, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য বা কোন না কোন ভাবে ১৯ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। (7)
 
কোরআনের বাইরেও প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘটনার মধ্যেও তিনি ১৯ কে নিয়ে আসেন (যেমন হ্যালির ধুমকেতু ৭৬ বছর (১৯*৪) পর পর আবির্ভুত হয়)।
 
রাশাদ খলীফার মতে এই ১৯ এর ব্যাপারটি কোরআনের ৭৪ নম্বর সুরাতেই বিদ্যমান। কোরআন ৭৪:৩০: তার উপরে রয়েছে "ঊনিশ"।
 
আল্লাহর ম্যাসেঞ্জারঃ
এরপরে তিনি নিজেকে আল্লাহর ম্যাসেঞ্জার হিসাবে দাবি করেন। (8)। তিনি কোরআনের ৩:৮১ কে নিজের মত করে অনুবাদ ও তাফসীর করে জানান যে, প্রোফেট বা রাসুল হলেন তারা যারা আল্লাহর ওহী প্রাপ্ত হন, এবং ম্যাসেঞ্জার হলো তিনি যিনি রাসুলের প্রতি নাযিলকৃত ওহীকে যথার্থতা প্রদান করবেন। তিনিই কোরআনকে তার প্রকৃত রূপে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন বিধায় তিনি সেই ম্যাসেঞ্জার। একইভাবে সুরা আত তাকবীরে (৮১:১৯-২৪) তিনি তাঁর বিখ্যাত ১৯ তত্ত্ব দিয়ে দেখিয়েছেন যে সেখানে যে ম্যাসেঞ্জারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আর কেউ নন, রাশাদ খলীফা নিজেই। (সুরা আত-তাকবীরের সুরা নাম্বার, আয়াত সংখ্যা, 'রাশাদ' ও 'খলীফা' শব্দদুটির gematrical value যোগ করলে হয় ১৩৩০, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং এই সুরায় উল্লেখিত ম্যাসেঞ্জার আর কেউ নন, রাশাদ খলীফা!!)। এবং তার অনুবাদে তিনি ২২ নং আয়াতে "সে" এর পাশে ব্রাকেটে "রাশাদ" যুক্ত করেও দিয়েছেন! 81:22: Your friend (Rashad) is not crazy. (9)
 
এবারে আবার ম্যাথমেটিকল মিরাকল দিয়ে প্রমাণ করে দেন যে তিনিই সেই ম্যাসেঞ্জার। তিনি এই আবিষ্কার জানান ১৯৭৪ সালে। এই ১৯ এর অলৌকিকত্ব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে ৭৪ নম্বর সুরায়, তিনি এই আবিষ্কার করেন ১৯৭৪ সালে। এই বছরটি হলো হিজরী ১৪০৬। ১৪০৬ = ১৯*৭৪। অতএব, তিনিই আল্লাহর ম্যাসেঞ্জার। (10)
 
কোরআনকে যথার্থতা প্রদানঃ
আজকের মোটামুটি যে গোটা দুনিয়ায় মোটামুটি একই ধরণের আদর্শ কোরআন পাওয়া যায় তা ১৯২৪ সালে মিশরের কায়রোতে ছাপানো এবং পরবর্তীতে সৌদি বাদশা ফাহাদের ছাপানো। কিন্তু বর্তমান প্রচলিত কোরআন এবং প্রাপ্ত প্রাচীণতম Tashkent কোরআনের মধ্যে বিভিন্ন জায়গার অমিলগুলো ধরে ধরে তিনি দেখিয়ে দেন (11), একই ভাবে দেখান Hafs এর কোরআন এবং Warsh এর কোরআনের মধ্যকার অমিল (12); সেখান থেকেই তিনি তার সিদ্ধান্ত জানান যে, দুনিয়াজুড়ে সমস্ত কোরআন-ই একই বলে যে দাবী করা হয় তা সত্য নয় এবং আমরা বর্তমানে যে কোরআন পাই তা আল্লাহ প্রদত্ত মূল কোরআন নয়, বরং তা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হওয়া কোরআন। সুতরাং প্রকৃত কোরআন পাওয়া সম্ভব একমাত্র ১৯ থিউরি দিয়েই, যেটি আল্লাহ ৭৪:৩০ এ এরশাদ করেছেন।
 
আর যেহেতু এসব কোরআনের বিভিন্ন কপিতে মনুষ্যকৃত ভুল থেকে গিয়েছে এবং প্রকৃত কোরআন পাওয়া সম্ভব সেই ১৯ দিয়েই, সুতরাং তিনি আসল কোরআনের সন্ধানে নেমে পড়েন।
সেখানে ধরে ধরে বিভিন্ন শব্দের শেষে, মাঝে শুরুতে অক্ষর দেয়া, আয়াত বাড়ানো-কমানো প্রভৃতি কাজ সমূহ করেন- যার ভিত্তি ছিল ১৯ থিউরি। একটি উদাহরণ দেই। প্রচলিত সমস্ত কোরআনেই আমরা জানি সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬ টি, যাকে ১৯ দ্বারা ভাগ করলে পাওয়া যায় ৩২৮.২১০৫২৬৩১....। কিন্তু রাশাদ খলীফার হিসাবে আমরা অন্য একটি সংখ্যা পাই, সেটি হলো ৬৩৪৬ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। তার হিসাবে দুধরণের আয়াতকে নিয়েছেন, নাম্বারড আয়াত ও আননাম্বারড আয়াত (সুরার শুরুর বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম)। এই আননাম্বারড আয়াতের সংখ্যা ১১২ টি এবং নাম্বারড আয়াত ৬২৩৪ টি। এভাবে ১৯ থিউরি অনুযায়ী কোরআনের প্রকৃত উদ্ধার করেছেন, এবং সেটা করতে গিয়ে প্রচলিত কোরআনের তুলনায় নাম্বারড আয়াতের সংখ্যা ২টি কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই দুটি আয়াত কমানো হয়েছে সুরা আত-তাওবাহ থেকে (১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত দুটি বাদ দেয়া হয়েছে)। এ দুটি আয়াত দেয়ার ক্ষেত্রেও মূল যুক্তি সেই ১৯ থিউরি এবং একটি বুখারী হাদীসের সমর্থন যেখানে বলা হয়েছে, 
Narrated Zaid bin Thabit: Abu Bakr sent for me and said, "You used to write the Divine Revelations for Allah's Apostle : So you should search for (the Qur'an and collect) it." I started searching for the Qur'an till I found the last two Verses of Surat At-Tauba with Abi Khuzaima Al-Ansari and I could not find these Verses with anybody other than him. (Volume 6, Book 61, Number 511). (13) 
 
পুরা কোরআনের মোট আয়াত সংখ্যার বিষয়টি তো আছেই, সেই সাথে তিনি দেখিয়ে দেন যে, সুরা তাওবার ১ম ১২৭ টি আয়াতে আল্লাহ শব্দটি এসেছে মোট ১২৭৩ বার যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য, কিন্তু ১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত যুক্ত করলে- আল্লাহ শব্দটি যতবার এসেছে সেই সংখ্যাটি ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হয় না। অতএব প্রমাণ হলো যে, ১২৮ ও ১২৯ নং আয়াত দুটি ভুল আয়াত! (14) মুসলিম ওলামায়ে বিশ্ব যখন খলীফার এই তত্ত্বকে এবং দাবীকে অস্বীকার করতে চাইলেন, তখনো তিনি কোরআনের সুরা আশ-শুরা এর ২৪ নং আয়াতের মাধ্যমে দেখিয়ে দিলেন যে, তাঁর এই উদ্ভাবনকে অনেকে মিথ্যা বলতে পারে সেটা অনেক আগেই কোরআনে জানান দেয়া হয়েছে এবং তিনি আসলে মিথ্যা নন।
৪২:২৪: অথবা তারা কি বলে,- "সে আল্লাহ সম্পর্কে এক মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে?" কিন্তু আল্লাহ যদি চাইতেন তবে তোমার হৃদয়ে তিনি মোহর মেরে দিতেন। বস্তুত আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে ফেলেন এবং সত্যকে সত্য প্রতিপন্ন করবেন তার বাণী দ্বারা। নিসন্দেহে তাদের অন্তরে যা রয়েছে তা সম্পর্কে তিনি সম্যক জ্ঞাতা”। 
 
এই আয়াতটিতে যে সে মানে রাশাদ খলীফা সেটির ব্যাখ্যাও কিন্তু ১৯ তত্ত্ব থেকেই পাওয়া যায় (রাশাদ খলীফার gematrical value (১২৩০) এর সাথে এই আয়াত নাম্বার (২৪) যোগ করলে পাওয়া যায় ১২৫৪ যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য, সুতরাং প্রমানিত হলো যে এখানে "সে" মানে "রাশাদ খলীফা")- এবং রাশাদ খলীফা কর্তৃক অনুবাদে "সে" এর পাশে ব্রাকেটে রাশাদ খলীফার নাম আমরা পাই।
[42:24] Are they saying, "He (Rashad) has fabricated lies about GOD!"? If GOD willed, He could have sealed your mind, but GOD erases the falsehood and affirms the truth with His words. He is fully aware of the innermost thoughts. (15)
 
প্রশ্নঃ
১। কোনটি ঠিক?
২। রাশাদ খলীফা যদি বেঠিক হন, তবে তার প্রচারিত থিউরি দিয়ে দুর্বল মুসলমানদের ইমান শক্ত-পোক্ত করার চেষ্টা কেমন? 
 
তথ্যসূত্রঃ 

কোন মন্তব্য নেই: