জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ নাকি সিডও সনদ, সংবিধান ও কোরআন-সুন্নাহ’র সমন্বয়ের ফসল? সমন্বয় আদৌ কি সম্ভব? এমন জগাখিচুরি সমন্বয়ে ‘নারীর উন্নয়ন’ কি সম্ভব?
আমাদের বর্তমান ডিজিটাল সরকার নানাবিধ নীতি-চুক্তি-প্রস্তাবনা প্রণয়নে ব্যস্ত। ইতোমধ্যেই আমরা শিক্ষানীতি, শ্রমনীতি, স্বাস্থ্য নীতি, শিশু নীতি, কয়লা নীতি (একাধিক), ওষুধ নীতি, গ্যাস নীতি, পিএসসি খসড়া চুক্তি ইত্যাদি পেয়েছি- আর সম্প্রতি পেলাম “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১”। অন্যান্য নীতিমালাগুলো নিয়ে কথা বলার মতো সুযোগ এখানে নেই- আজ কেবল নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে কলম ধরা।
নারী নীতির ভূমিকার (১ম ভাগ ১ নং অনুচ্ছেদ) শুরুর কয়েকলাইনে বলা হয়েছে:
“বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ নারী। নারী উন্নয়ন তাই জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। সকল ক্ষেত্রে নারীর সমসুযোগ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য”।
১ম ভাগ ৪.১ নং অনুচ্ছেদটির শিরোনামই হচ্ছে
“নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ” (সিডও সনদ) এবং ২য় ভাগের ১৭.২ ধারায় নারী নীতি ২১১ এর লক্ষ হিসাবে বলা হয়েছে: “নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (CEDAW) এর প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।”
১ম ভাগের ৫ নং অনুচ্ছেদ (নারীর মানবাধিকার ও সংবিধান) এ শুরুতেই সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হয়েছে:
“সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী”,
এছাড়াও সেখানে সংবিধানের ২৭, ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৩), ২৮(৪), ২৯(১), ২৯(২) ও ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদ তুলে ধরা হয়েছে। স্বভাবতই অনেকের মধ্যেই একটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। আওয়ামিলীগ হয়তো একটা যুগান্তকারী নারী নীতিমালা জাতিকে উপহার দিতে যাচ্ছে, নারী প্রশ্নে শক্ত ও প্রগতিশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে হাসিনার ডিজিটাল সরকার- এমন স্বপ্নও ছিল কারো কারো- সাথে ছিল আশংকা – মোল্লাদের সাথে পেরে উঠবে তো। অবশ্য আমার ছিল সন্দেহ। হিজাব পরে ভোট ভিক্ষা চাওয়া হাসিনা, “নৌকার মালিক তুই আল্লাহ”র আওয়ামিলীগ, খেলাফত মজলিশের সাথে চুক্তি সম্পাদনকারী আওয়ামিলীগ আমার চোখে কখনোই প্রগতিশীল ছিল না, ফলে আশান্বিত হওয়া বা স্বপ্ন দেখার স্বম্ভাবনাও ছিলনা। সন্দেহ ছিল, প্রশ্নও ছিল- আওয়ামিলীগ আসলে কি করতে যাচ্ছে এই নীতিমালা নিয়ে এবং কি আছে এতে।
জবাব মিলতে দেরি হয় না- হাতে নারী নীতি ২০১১ চলে আসে, এবং আমিনীর হুংকার শুনে- হাসিনা থেকে শুরু করে আওয়ামি মন্ত্রী-মিনিস্টার সবাই সমস্বরে জানান দিতে থাকে, এই নারী নীতির সাথে নাকি কোরআন-সুন্নাহর কোন বিরোধ নাই। যেভাবে ও যে হারে আওয়ামিলীগ চেচাতে থাকে- তাতে এটা আবারো পরিস্কার হয় যে- এই দলের কাছে প্রগতিশীলতার চাইতেও মুসলিম ভোট ব্যাংক অনেক গুরুত্বপূর্ণ! এ নিয়ে বেশী কিছু বলার নেই, কেননা এটা তো আর নতুন নয়। বরং মজা পাই এ দাবীতে যে- নারী নীতির সাথে নাকি কোরআন-সুন্নাহর কোন বিরোধ নাই! কেননা এ দাবীও করা হয়েছে যে (নারী নীতিতেও অঙ্গীকার করা হয়েছে)- ‘এটা সিডও সনদকে বাস্তবায়ন করবে!’ -‘এটা বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে!’ এসব কি কোরআন-সুন্নাহর পরিপূরক কোন নীতি দ্বারা সম্ভব? প্রথমে সেটাই দেখি তাহলে।
কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে: সিডও সনদ বাস্তবায়ন কি কোরআন-সুন্নাহর আলোকে সম্ভব? সিডও সনদ মানেই হচ্ছে নারীর প্রতি যেকোন প্রকার বৈষম্য বিলোপ। কোরআন-সুন্নাহ কি এই বৈষম্য বিলোপের বিপক্ষে? মোটেও না, কখনো না। উল্টো কোরআন নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্যকে সমর্থন করে এবং নারীকে পুরুষের অধীনস্ত মনে করে। সুতরাং সিডও সনদ আর কোরআন-সুন্নাহ সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর।
আমাদের সংবিধানের সাথে কি কোরআন-সুন্নাহর বিরোধ নেই? সংবিধানের ২৭, ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৩), ২৮(৪), ২৯(১), ২৯(২) অনুচ্ছেদগুলোতে সরাসরি নারী-পুরুষের সমান অধিকারের ব্যাপারে বলা আছে, সেখানে কোরআন কি মনে করে? কোরআনের চোখে নারী পুরুষের সমকক্ষ নয়। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে পুত্র সন্তান কন্যা সন্তানের দ্বিগুন পাবে, ১ জন পুরুষ সাক্ষ্য = ২ নারী সাক্ষ্য, স্বামী স্ত্রীকে প্রহার করতে পারে ইত্যাদি। এ সবই সংবিধানের উপরের ধারাগুলোর বিপরীত। যদিও, উত্তরাধিকার আইন থেকে শুরু করে অনেককিছুই সংবিধান সমর্থিত আইনে কোরআন-সুন্নাহকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে- যা আবার সংবিধানের উপরের ধারাগুলোর বিপরীত, সুতরাং- বলা যায় সংবিধান নিজেই স্ববিরোধিতায় ভরপুর। আমাদের সংবিধানে যেমন কোরআন-সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক বিষয় আছে, তেমনি পরিপূরক বিষয়াদিও আছে। সংবিধান রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কথা বলে, বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু হয়, সংবিধান পারিবারিক উত্তরাধিকার আইন, মুসলিম বিবাহ আইনকে সমর্থন করে। আবার উল্টোদিকে- উপরিউক্ত ধারাগুলো যেমন আছে, তেমনি আমাদের সংবিধান সাক্ষ্য আইন ১৯৭২ কে, চুক্তি আইন ১৯৭২ কে সমর্থন করে। এই আইনের বলে- আদালতে ও নির্বাচনে, চুক্তি সম্পাদনে নারী পুরুষের সমান মর্যাদা পায়। যা সরাসরি কোরআন-সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে স্ত্রীকে প্রহার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যদিও কোরআনে স্ত্রীকে প্রহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে, কোন নীতিই একই সাথে কোরআন-সুন্নাহ আর সিডও সনদ কিংবা সংবিধান ও কোরআন-সুন্নাহর পরিপূরক হতে পারে না। তাহলে- আমাদের নারী নীতি ২০১১ প্রকৃত প্রস্তাবে কিরূপ? কার পরিপূরক- কার বিপরীত? সেটাই তবে দেখা যাক।
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এ কি আছে?
প্রথমেই দেখা যাক প্রথম ভাগের ৪.১ অনুচ্ছেদ, যে ৪.১ অনুচ্ছেদ নিয়ে এত কথাবার্তা- সেটাতে আসলে তেমন কিছুই নেই। শিরোনামটাই কেবল “নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ”!
ভেতরে আছে- সিডও সনদে বাংলাদেশ কবে কিভাবে স্বাক্ষর করেছে। ফলাও করে বলা
হয়েছে- বাংলাদেশ সিডও সনদে প্রথম দশ স্বাক্ষরকারী দেশের একটা। তো- সেই
স্বাক্ষরও বাংলাদেশ করেছে প্রায় এক যুগ আগে। তো? বৈষম্য কি আদৌ দূর হয়েছে?
৪.১ নং অনুচ্ছেদটি তাহলে পড়া যাক:
৪.১ নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ :
“রাষ্ট্র, অর্থনীতি, পরিবার ও সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ডিসেম্বর, ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও) গৃহীত হয় এবং ৩ সেপ্টম্বর ১৯৮১ সালে কার্যকর হয়। নারীর জন্য আন্তর্জাতিক বিল অব রাইটস বলে চিহ্নিত এ দলিল নারী অধিকার সংরক্ষণের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মানদণ্ড বলে বিবেচিত। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চারটি ধারায় [২, ১৩(ক), ১৬(ক) ও ১৬(চ)] সংরক্ষণ সহ এ সনদ অনুসমর্থন করে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে ধারা ১৩(ক) এবং ১৬.১(চ) থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হয়। এই সনদে অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্ররূপে বাংলাদেশ প্রতি চার বছর অন্তর জাতিসংঘে রিপোর্ট পেশ করে। সর্বশেষ ষষ্ঠ ও সপ্তম পিরিয়ডিক রিপোর্ট ডিসেম্বর, ২০০৯ সালে জাতিসংঘে প্রেরণ করা হয় ও ২৫ জানুয়ারি ২০১১ তে সিডও কমিটিতে বাংলাদেশ সরকার রিপোর্টটি উপস্থাপন করে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে প্রায় সকল ফোরামে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ ও আন্তর্জাতিক সনদ ও দলিলসমূহে স্বাক্ষরের মাধ্যমে নারী উন্নয়নে বিশ্ব ভাবধারার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। ২০০০ সালে অনুষ্ঠিত মিলেনিয়াম সামিটের অধিবেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। একই সময় Optional Protocol on CEDAW-তে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে। গুরুত্বপূর্ণ এই সনদে স্বাক্ষরকারী প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এছাড়াও আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সনদে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী ও অনুসমর্থনকারী রাষ্ট্র হিসেবে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণে নিজ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।”
অর্থাৎ ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ চারটি ধারায় [২, ১৩(ক), ১৬(ক) ও ১৬(চ)] সংরক্ষণ সহ এ সনদ অনুসমর্থন করে- পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে যার মধ্যে ধারা ১৩(ক) এবং ১৬.১(চ) থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হয়। তার মানে, ধারা ২ এবং ধারা ১৬ (ক) থেকে এখনও সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা হয় নি! ধারা ২ ও ধারা ১৬ (ক) এ সংরক্ষণ রাখার কারণ এগুলো নাকি কোরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী!
তাহলে শুরুতে ধারা ২ এবং ধারা ১৬ (ক) -ই দেখা যাক:
ধারা ২:
Article 2
States Parties condemn discrimination against women in all its forms, agree to pursue by all appropriate means and without delay a policy of eliminating discrimination against women and, to this end, undertake:
(a) To embody the principle of the equality of men and women in their national constitutions or other appropriate legislation if not yet incorporated therein and to ensure, through law and other appropriate means, the practical realization of this principle;
(b) To adopt appropriate legislative and other measures, including sanctions where appropriate, prohibiting all discrimination against women;(c) To establish legal protection of the rights of women on an equal basis with men and to ensure through competent national tribunals and other public institutions the effective protection of women against any act of discrimination;
(d) To refrain from engaging in any act or practice of discrimination against women and to ensure that public authorities and institutions shall act in conformity with this obligation;
(e) To take all appropriate measures to eliminate discrimination against women by any person, organization or enterprise;
(f) To take all appropriate measures, including legislation, to modify or abolish existing laws, regulations, customs and practices which constitute discrimination against women;
(g) To repeal all national penal provisions which constitute discrimination against women.
ধারা ১৬ (ক):
Article 16
1. States Parties shall take all appropriate measures to eliminate discrimination against women in all matters relating to marriage and family relations and in particular shall ensure, on a basis of equality of men and women:
(a) The same right to enter into marriage;
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে- ধারা ২ হচ্ছে পুরা সিডও সনদের একদম Policy Measures – যাকে বলা যায় সিডও সনদের প্রাণ তথা মূলনীতি। একে বাদ দিয়ে সিডও সনদে স্বাক্ষর করা (১ম ১০ স্বাক্ষরকারী দেশের অন্যতম হওয়া) আমার কাছে রেইনকোট পরে বৃষ্টিতে গোসল করার মতই মনে হয়েছে, কিংবা বলা যেতে পারে- মক্কায় হজ্জে যামু মাগার নামাজ পড়ুম না- এই টাইপের!!! এবং ১৬ নং ধারাটি হচ্ছে বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ নীতি, শুধু এক লাইন: “বিবাহে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নারী ও পুরুষের একই অধিকার”- এটাও বাদ দিয়ে স্বাক্ষর করা হয়েছে কেবল এই অযুহাতে তা কোরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী হবে!!!! এবং এই জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এ কোথায় বলা হয় নি যে- ধারা ২ ও ধারা ১১ থেকে সংরক্ষণ তুলে নেয়া হবে!
ফলে, এবার আমাকে বলুন- সিডও সনদ ও কোরআন-সুন্নাহ পরষ্পর পরিপন্থী হতে পারে, কিন্তু সিডও সনদে বাংলাদেশের স্বাক্ষর ও কোরআন-সুন্নাহ কি সাংঘর্ষিক? কিংবা নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ ও কোরআন-সুন্নাহ? যতই- এই নারী নীতি ২০১১ এর ১৭.২ ধারায় বলা হোক না কেন: “নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ (CEDAW) এর প্রচার ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।”- এটা দ্বারা ধারা ২ ও ১৬ (ক) বাদ দিয়েই কেবল CEDAW এর প্রচার ও বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে!
৪.১ অনুচ্ছেদের পরেই আছে ৫ নং ধারা: নারীর মানবাধিকার ও সংবিধান। সেখানে সংবিধানের ২৭, ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৩), ২৮(৪), ২৯(১), ২৯(২) ও ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদ তুলে ধরা হয়েছে।
“কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না” (২৮/১)
“কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না” (২৮/৩)
“নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না” (২৮/৪)
“প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে” (২৯/১)
“কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ নারীপুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মের নিয়োগ বা পদলাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না” (২৯/২)
নারী নীতির ৫ নং ধারায় সংবিধানের এইসব অনুচ্ছেদ পড়তে কতই না ভালো লাগে- অনেক সময় এমনও মনে হতে পারে- এ বুঝি ১মবারের মত এই নারী নীতিরই আবিস্কার! বাস্তবে উল্লসিত হওয়ার মত কিছু নেই। এসমস্ত অনুচ্ছেদই ১৯৭২ সালে লিখিত (৬৫/৩ ব্যতীত)। বাস্তবে আমাদের সংবিধানটাই হচ্ছে স্ববিরোধিতায় ভরপুর- সংবিধানের উপরিউক্ত অনুচ্ছেদগুলো বলবদ থাকলে কোন প্রকারেই সংবিধান স্বীকৃত ব্যক্তিগত পারিবারিক উত্তরাধিকার আইন ১৯২৫, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ ও সংশোধনী ১৯৮৯, বিবাহ সংক্রান্ত আইন প্রভৃতি কোন প্রকারেই টিকার কথা নয়। অথচ- উত্তরাধিকার বন্টনের ক্ষেত্রে ইউনিভার্সল ফ্যামিলি কোড আইনের পরিবর্তে মুসলিম পারিবারিক আইন (পুত্র কন্যার দ্বিগুন পাবে), হিন্দু আইন (বৌদ্ধদের জন্যও একই: আরো বর্বর- কন্যা সন্তান কিছুই পাবে না) প্রভৃতি এখন চলছে- মুসলিম বিবাহ আইন, হিন্দু বিবাহ আইন প্রভৃতিও চলছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে- সাক্ষ্য আইন ১৯৭২ ও চুক্তি আইন ১৯৭২ দ্বারা সাক্ষ্য হিসাবে বা চুক্তিসম্পাদনকারী হিসাবে নারী ও পুরুষ সমান হিসাবে বিবেচিত হলেও- মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী বিয়ের সাক্ষ্য হিসাবে ১জন পুরুষ সমান ২ জন নারীই কেবল নয়, ২ জন পুরুষের ক্ষেত্রে ৪ জন নারী থাকলেও চলবে না- কমপক্ষে ১ জন পুরুষ থাকতেই হবে!!!! (২ জন পুরুষ সাক্ষ্য থাকলে নারী সাক্ষ্যের কোন দরকার নেই!!)
যাহোক, যেটা বলছিলাম- খুব ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে যে-নারী নীতিতে উল্লেখিত সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলো প্রায় সবই ১৯৭২ সালে রচিত হলেও সেগুলো ৪১ বছর ধরে কেবল কথার কথা হিসাবে রয়ে গিয়েছে- কেননা- এই সংবিধান অনুযায়ীই মুসলিম-হিন্দু-খৃস্টান বিবাহ আইন, উত্তরাধিকার আইন এগুলো আমাদের দেশের প্রচলিত আইন। সুতরাং- এই সব প্রচলিত আইন রদের বিষয়ে কোন সুপারিশ না রেখে- কেবল ঐসবের উল্লেখ শুভংকরের ফাঁকি ছাড়া কিছুই না। আলবৎ এগুলো ধোঁকাবাজি। নারী উন্নয়ন নীতির ২য় ভাগ দেখুন। এখানে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির লক্ষ্য (১৬) হিসাবে প্রথমেই বলা হয়েছে:
১৬.১ “বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্রীয় ও গণজীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।”
বর্তমানের আমাদের স্ববিরোধী সংবিধানের আলোকে আপনারাই বলেন- কতটুকু সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব?
এবারে আসি ২য় অধ্যায়ে। এই অধ্যায়কে বলতে পারেন- নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এর মূল পদক্ষেপ/ নীতি / লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
১৬. জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির লক্ষ্য (২২ টি ধারা)
১৭. নারীর মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ (৯ টি ধারা)
১৮. কন্যা শিশুর উন্নয়ন(৮ টি ধারা)
১৯. নারীর প্রতি সকল নির্যাতন দূরীকরণ (১১ টি)
২০. সশস্ত্র সংঘর্ষ ও নারীর অবস্থা (৩ টি)
২১. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ (৩)
২২. ক্রীড়া ও সংস্কৃতি (৪)
২৩. জাতীয় অর্থনীতির সকল কর্মকান্ডে নারীর সক্রিয় ও সমঅধিকার নিশ্চিতক (১১ টি)
২৪.নারীর দারিদ্র দূরীকর (৫ টি)
২৫. নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন (২ টি)
২৬. নারীর কর্মসংস্থান (৬ টি)
২৭. জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট এবং জেন্ডার বিভাজিত (Disaggregated) ডাটাবেইজ প্রণয়ন (৩ টি)
২৮. সহায়ক সেবা (১ টি)
২৯. নারী ও প্রযুক্তি (৩ টি)
৩০. নারীর খাদ্য নিরাপত্তা (৩ টি)
৩১. নারী ও কৃষি (৪ টি)
৩২. নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন (৯ টি)
৩৩. নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন (৭ টি)
৩৪. স্বাস্থ্য ও পুষ্টি (১১ টি)
৩৫. গৃহায়ণ ও আশ্রয় (৩ টি)
৩৬. নারী ও পরিবেশ (৩ টি)
৩৭. দুর্যোগ পূর্ববর্তী, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে নারী ও শিশুর সুরক্ষা (১০ টি)
৩৮. অনগ্রসর ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি নারীর জন্য বিশেষ কার্যক্রম (৩ টি)
৩৯. প্রতিবন্ধী নারীর জন্য বিশেষ কার্যক্রম : (৬ টি)
৪০. নারী ও গণমাধ্যম (৪ টি)
এসবের মাঝে অনেক ধারাই দেখা যাবে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে আইন পর্যন্ত আছে
কিংবা সব সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মুখে হলেও নীতিগত সমর্থন জানিয়েছেন –
কিন্তু আদতে সেগুলোর বাস্তবায়ন কতটা হচ্ছে তা দেখার ফুসরত কখনো কারো হয় নি
(যেমন: নারী সমাজকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা, নারীর মানবাধিকার
প্রতিষ্ঠা করা, নারী সমাজকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা, নারী
পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন করা, নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি সকল প্রকার
নির্যাতন দূর করা, নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি বৈষম্য দূর করা ইত্যাদি)।
ফলে, এসব ধারা বা লক্ষ্য কিভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে তা উল্লেখ না থাকলে যথারীতি একটা অনাস্থা তৈরি হয়ে যায়, কেননা এসব সুন্দর সুন্দর কথা আমাদের সেই কোন আমল থেকেই শোনানো হয়েছে এবং এখনো শুনছি কার্যত উপর উপর ও লোকদেখানো কিছু কর্মকান্ড ছাড়া কোন পদক্ষেপই আ চোখে পড়েনি কখনো।
নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ লক্ষ্য শীর্ষক অনুচ্ছেদের ১৭.৫ নং লক্ষ্য তথা নীতিটি দেখি:
“স্থানীয় বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন ধর্মের কোন অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারী স্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইন বিরোধী কোন বক্তব্য প্রদান বা অনুরূপ কাজ বা উদ্যোগ গ্রহণ না করা।”
পড়ে অবাক হই এবং ভাবি- কেন আমিনী গং এই নারী নীতির বিরুদ্ধে এত চেচামেচি করছে? হাইকোর্ট পর্যন্ত যে ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় দিয়ে বসেছে (এবং আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ক্ষায় আছে)- এই নারী নীতি ২০১১ ফতোয়াকে নিষিদ্ধ করার সাহস ধারণ করে না। বরং ফতোয়াকে একভাবে জায়েজ করে দেয়া হয়েছে এখানে। উল্লেখিত ১৭.৫ নং নীতি একটু ভালো করে পড়লেই আশা করি বুঝতে পারবেন। “কোন ধর্মের কোন অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে” নারী স্বার্থের পরিপন্থী এবং প্রচলিত আইন বিরোধী কোন বক্তব্য প্রদান বা অনুরূপ কাজ বা উদ্যোগ গ্রহণ করা যাবে না। খেয়াল করবেন কিন্তু। কোন ধর্মের কোন অনুশাসনের ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারী স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করা যাবে না- এই বাক্যটি দ্বারা আসলে কি বুঝায়? ধর্মীয় অনুশাসনের সঠিক ব্যাখ্যার ভিত্তিতে নারী স্বার্থের পরিপন্থী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে তাহলে? নাকি- এই নীতিমালা প্রণেতারা মনে করেন যে- ধর্মীয় অনুশাসনের সঠিক মোতাবেক যে ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন- তা-ই হয়ে যাবে নারীর স্বার্থানুযায়ী?
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে- এই জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রকাশের পর সবচেয়ে বেশী আলোচনা হয়েছে পারিবারিক উত্তরাধিকার আইন নিয়ে। আমিনী ও তাবৎ মোল্লা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে পুরুষেরা হায় হায় করে উঠেছে সম্পত্তির উত্তরাধিকার বন্টন বিষয়ে, ভয়ে চিৎকার করে উঠেছে- এবং কোনমতেই যাতে পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারী পুরুষের সমান ভাগ না পায় সে ব্যাপারে উচ্চকিত থেকেছে! বিভিন্ন জায়গায় এর পক্ষে-বিপক্ষে ডিবেট হয়েছে। আমার মাও একদিন তার অফিস থেকে হতাশ হয়ে এসে বললেন- শিক্ষিত মানুষেরাও (আমি সংশোধন করে দিয়েছিলাম- “বলো পুরুষেরা”) যদি না বুঝে- আজে বাজে যুক্তি করতে থাকে- তাহলে কেমন করে হবে! (কয়েকটা মজার যুক্তির কথা মা বললো- “মেয়ের বিয়েতে প্রচুর খরচ করতে হয়”!! “মেয়ে তো বিয়ের পরে চলে যায়”!! “মেয়ের তো লস হচ্ছে না- তার স্বামীতো আবার ঠিকই দ্বিগুন সম্পত্তিই আনছেই” … ইত্যাদি)
এমন যুক্তি-তর্কের ঝড়, অথচ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও আমি উত্তরাধিকার ও সমানাধিকার একসাথে কোন জায়গাতেই পেলাম না। অবাক ব্যাপার তাই না? একদল আওয়ামীলীগ কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কাজ করে ফেললো বলে জিগির তুলছে আর অন্যদিকে আমার মা ও অনেকেই আওয়ামিলীগকে- হাসিনাকে প্রগতিশীল ভেবে গদগদ হয়ে যাচ্ছে! এই মিথ্যাপ্রচারণাটা চালালো কে? হাসিনাদের বক্তব্য অনুসারে আমিনী গং!
নারী নীতি ২০১১ খুঁজে নীচের ধারাগুলো পেলাম- যেগুলোর দেখে অনেকে এমন মনে করতে পারে যে- উত্তরাধিকারে সমান অধিকার দেয়া হচ্ছে:
“২৩.৫ সম্পদ, কর্মসংস্থান, বাজার ও ব্যবসায় নারীকে সমান সুযোগ ও অংশীদারিত্ব দেয়া।
২৫.২ উপার্জন, উত্তরাধিকার, ঋণ, ভূমি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করা।”
মজার ব্যাপার হচ্ছে- সম্পদ মানে কেবল উত্তরাধিকার বুঝায় না। রাষ্ট্রীয়/পাবলিক সম্পদ, সুযোগ-সুবিধা বেশী প্রযোজ্য এখানে। ফলে, নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে এসব ক্ষেত্রে। আর, ২৫.২ ধারাটিতে উত্তরাধিকার শব্দটি উল্লেখ করা হলেও সমান অধিকার শব্দটি সেখানে নেই- আছে নারীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ উত্তরাধিকার বন্টন কেমন করে হবে- সে বিষয়ে কোন কথা নেই, আছে- তা যেমনেই বন্টন করা হোক না কেনে- বন্টিত উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার থাকবে নারীর!! এটা আসলে, একরকম ধাপ্পাবাজিই- এমনভাবে ভাষায় প্রকাশ করেছে যে হঠাতই মনে হবে- কতই না প্রগতিশীল- ভালো করে তাকালে বুঝা যায়- পুরাটাই ঠনঠন!!
আর সে কারণেই- শুরুতে আওয়ামিলীগ সুশীল সমাজের উদ্দেশ্য প্রচার করলো- তারা কত প্রগতিশীল- নারীদের সমান অধিকার দেয়ার জন্য নারী উন্নয়ন নীতিমালা করেছে, নারীদের প্রতি সমস্ত বৈষম্য তারা দূর করে ফেলছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর, যখনই আমিনীরা একটু নড়েচড়ে বসলো- তখন সমস্বরে সমস্ত আওয়ামিলীগাররা বলা আরম্ভ করে দিলো যে- “এতে কোরআন-সুন্নাহর পরিপন্থী কিছু নাই, নীতিমালা পড়ে আসেন – ওপেন চ্যালেঞ্জ- একটাও নীতি বের করতে পারবেন যেটা কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী” ইত্যাদি।
হরতালের আগের দিন তো ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে সমস্ত দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি আকারে ছাপানো হলো যে- আমিনী গং দের সমস্ত দাবীই মিথ্যা।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য নিয়ে বলার কিছু নেই- নারী নীতি ২০১১ পড়ার পরেই মনে হয়েছে- এগুলোর আসল অর্থ কি। এই বিজ্ঞপ্তিতে দেখার মতো বিষয়টা হচ্ছে- বিসমিল্লাহ আর আসসালামের ছড়াছড়ি! বুঝেন তাইলে- এই হইলো আমাদের সেক্যুলার(!) আওয়ামিলীগের চেহারা! আসলে, তশবী হাতে ফটুক লাগায়া দেশবাসীর ভোট চায় যে দল- ভোটে জেতার জন্য খেলাফত মজলিশের মত দলের সাথে যারা সমঝোতা করে- ফতোয়ার বিধানকে পর্যন্ত জায়েজ করতে কুন্ঠা বোধ করে না- তাদের সেক্যুলার প্রগতিশীল কেবল দলান্ধরাই বলতে পারে!
আমার যেটা মনে হয়েছে- নারীর অবস্থা যা ছিল তাই থাকবে। এটা কেবল বিদেশী দাতাগোষ্ঠীকে আকর্ষণ করার একটা কৌশল মাত্র। এনজিওগুলোরও কিছু চাপ থাকতে পারে। উদ্দেশ্য যাই থাক- ফলাফল আমার মনে হয়েছে খুব নেতিবাচক। নারীর প্রকৃত উন্নয়ন চাইলে, নারীর সমান অধিকার চাইলে, নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ চাইলে সবার আগে দরকার নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসাবে বিবেচনা করা – এটা কেবল তখনই সম্ভব যখন পুরুষতান্ত্রিক কুসংস্কার দূর করা যাবে, এই পুরুষতান্ত্রিক কুসংস্কার যেহেতু পুরুষদের তৈরী ধর্মসমূহের লালন-পালনে-আশ্রয়ে পরিপুষ্ট হয়, সেহেতু নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পুরুষতান্ত্রিক ধর্মসমূহের সাথে সাংঘার্ষিক, কোরআন-সুন্নাহ, বেদ-বেদান্ত, বাইবেল-তাওরাত প্রভৃতির নারী বিরোধী বক্তব্য/ অনুশাসনের বিরুদ্ধে দাড়িয়েই তা আদায় করতে হবে। হাসিনা ও তার আওয়ামিলীগ যে নারী নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে- সেখানে এই প্রয়োজনীয় কাজটি সুচারুভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এই যে, আমাদের পুরাতন অর্জনগুলো এমনভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এসব এই নারী নীতিতেই প্রথম আমদানী করা হয়েছে এবং আমিনী গংদের কোরআন-সুন্নাহ গেল গেল রবের মুখে শাসক গোষ্ঠীর সমস্বরে কোরআন-সুন্নাহ আছে আছে বলে জবাবে, আমাদের নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নৈতিক ভাবে কিছুটা হলেও দুর্বল হলো- কেননা চারিদিকে কেবল এটাই প্রচারিত হলো- কোরআন-সুন্নাহ’র বিপরীত কিছু করা যাবে না এবং করা হয় নি।
[মুক্তমনা ব্লগে এপ্রিল ২০১১ সালে প্রকাশিত।]
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন