Wednesday, May 25, 2016

রেজর'স এজ (RAZOR'S EDGE)


DW: International jury announces winners of 'The Bobs' 2016

Citizen Journalism: Documentary film "Razor’s Edge" from Bangladesh
Bobs 2016 Razor's Edge Nastiker Dharmakatha Citizen Journalism, Razor’s Edge
The "Razor's Edge" documentary by 35-year-old filmmaker Nastiker Dharmakatha – a pseudonym that translates to "an atheist's religious speech" – reveals the life-threatening situation confronting secular bloggers in Bangladesh. As bloggers and writers are murdered by religious extremists, high-ranking politicians ignore – or even support – the killing spree.
Rafida Bonya Ahmed, a first-time member of The Bobs jury, previous award winner and widow of murdered blogger Avijit Roy, commented on the current situation in Bangladesh: "Honoring projects from Bangladesh two years in a row is a sign that the situation has not got better. Rather it has got much worse. There were four deadly attacks in the last five weeks. Secular activists, writers, bloggers, teachers, minorities – nobody is safe anywhere in the country."

ব্লগার হত‍্যা নিয়ে তৈরি তথ‍্যচিত্র পাচ্ছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স প্রতিযোগিতার ‘জুরি অ‍্যাওয়ার্ড' জয় করেছে একটি ভিডিও তথ‍্যচিত্র৷ বাংলাদেশে ব্লগার ও অ‍্যাক্টিভিস্টদের হত‍্যা নিয়ে তৈরি তথ‍্যচিত্রটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে রাজনীতিবিদরা হত‍্যাকাণ্ডকে সমর্থন দিচ্ছেন৷
Bobs 2016 Razor's Edge Nastiker Dharmakatha ‘নাস্তিকের ধর্মকথা' ছদ্মনামে ব্লগ লেখা একজন ব্লগার তথ‍্যচিত্রটি তৈরি করেছেন
ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স প্রতিযোগিতায় এ বছর চারটি ক‍্যাটাগরিতে জুরি অ‍্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ সোমবার বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বব্সের জুরিমণ্ডলী চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন৷ প্রতিযোগিতার ‘সিটিজেন জার্নালিজম' বা নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ব্লগার হত‍্যা নিয়ে তৈরি তথ‍্যচিত্র ‘‘রেজর'স এজ৷'' বাংলাদেশে মুক্তমনাদের উপর ক্রমাগত হামলা নিয়ে তৈরি ভিডিও তথ‍্যচিত্রটি ইতোমধ‍্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেছে৷
‘নাস্তিকের ধর্মকথা' ছদ্মনামে ব্লগ লেখা একজন ব্লগার তথ‍্যচিত্রটি তৈরি করেছেন৷ দ‍্য বব্স অ‍্যাওয়ার্ড জেতায় উচ্ছ্বসিত এই ব্লগার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের ‘‘রেজর'স এজ'' ডকুমেন্টারিটি সিটিজেন জার্নালিজম ক্যাটেগরিতে বব্স অ্যাওয়ার্ডের জন্যে নির্বাচিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত৷ এই কাজটির সাথে যুক্ত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই৷''
হিটলিস্টে থাকা এক ব্লগারের তৈরি তথ‍্যচিত্র
নাস্তিকের ধর্মকর্থা'র নাম ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের ‘হিটলিস্ট'এ একাধিকবার এসেছে৷ জীবন বাঁচাতে তাই বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থেকেছেন তিনি এবং তাঁর পরিবারের সদস‍্যরা৷ বর্তমানে ইউরোপের একটি দেশে সপরিবারে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা এই ব্লগার বলেন, ‘‘ডকুমেন্টারিটি আমাদের কাছে, কেবলই একটি ডকুমেন্টারি বা শিল্প প্রচেষ্টা নয়, বরং অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যম৷ বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে একের পর এক মুক্তমনা, নাস্তিক, সেক্যুলার লেখক, ব্লগার, প্রকাশক হত্যার মহোৎসব শুরু হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটকে আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি এর মাধ্যমে৷''
Dokumentation RAZOR'S EDGE তথ্যচিত্রের একটি দৃশ্য
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছি প্রথমত, কী ঘটছে বাংলাদেশে? দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন হিটলিস্টে থাকা ব্লগারদের কী অবস্থা? কেমন আছে তারা? তৃতীয়ত, আমাদের রাজনীতিবিদদের ভূমিকা কী? এবং চতুর্থত, ইতোমধ্যেই আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সবাইকে বলা, এ ভীষণ ক্ষতি৷ আমরা আর একজনকেও হারাতে চাই না৷''
Niederlande Bangladesch Solidarität Buch Messe নেদারল্যান্ডসে গত ফেব্রুয়ারিতে একটি বইমেলায় তথ্যচিত্রটি দেখানো হয়
বাড়ছে হত‍্যার পরিধি, নীরব সরকার
বাংলাদেশে গতবছর চার মুক্তমনা ব্লগার এবং এক প্রকাশক খুন হন৷ একটি উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী এসব হত‍্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ আর গতমাসে একাধিক হামলায় খুন হয়েছেন তিনজন অ‍্যাক্টিভিস্ট, একজন হিন্দু এবং একজন মুক্তমনা বিশ্ববিদ‍্যালয় শিক্ষক৷ ব্লগার নাস্তিকের ধর্মকথা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এপ্রিলের শুরু থেকে বাংলাদেশে জঙ্গিরা প্রবলভাবে আক্রমণ শুরু করেছে৷ মুক্তমনা, নাস্তিক লেখক-ব্লগারেই তারা সীমাবদ্ধ নেই, তারা সমকামী আন্দোলনের কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, হিন্দু পুরোহিত, ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান, শিয়া ইমাম, সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতা, বিদেশি জনগণ সকলকে তাদের আঘাতের লক্ষ‍্যবস্তু বানাচ্ছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘সরকার এই ঘটনাগুলোর তদন্তকার্যে, খুনিদের ধরতে ও দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চুপ ও নিষ্ক্রিয় রয়েছে, বরং আক্রান্তদের দোষারোপ করা, ‘ইসলামিক স্টেট,' আল-কায়দা প্রভৃতি জঙ্গি গোষ্ঠীর উপস্থিতির কথা অস্বীকার করা, এবং নানারকম দায়িত্বহীন ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা – এ কাজগুলো নিষ্ঠার সাথে করে চলেছে৷''
‘‘বিভিন্ন বক্তব্য যেমন ‘ব্লগারদের আজেবাজে কথার জন্যে যদি কোনো অঘটন ঘটে, তার জন্যে সরকার কোনো দায়িত্ব নিবে না,' ‘সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না,' ‘আমাদের সমাজে সমকামিতা মানানসই নয়,' ‘পুলিশ ঘরে ঘরে পাহারা দিতে পারবে না' ইত্যাদি বাস্তবে খুনি জঙ্গিদের পরবর্তী আক্রমণের জন্যে ভীষণ উৎসাহিত করছে'', বলে মনে করেন নাস্তিকের ধর্মকথা৷
‘পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে'
ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স প্রতিযোগিতায় চলতি বছর বাংলা ভাষার বিচারক ছিলেন ব্লগার বন‍্যা আহমেদ৷ গতবছর ঢাকায় মৌলবাদীদের হামলায় গুরুতর আহত এই ব্লগার বার্লিনে জুরিমণ্ডলীর বৈঠকে বাংলা ভাষার বিভিন্ন প্রকল্প তুলে ধরেন৷ ‘‘রেজর'স এজ'' তথ‍্যচিত্রকে বিজয়ী ঘোষণার মাধ‍্যমে কার্যত পরপর দু'বার বাংলা ব্লগারদের কাজের স্বীকৃতি দিচ্ছে দ‍্য বব্স৷ গত বছর এই অ‍্যাওয়ার্ড জয় করেছিল ঢাকায় নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের মুক্তমনা ব্লগ৷
‘‘পরপর দু'বছর বাংলাদেশের ব্লগারদের প্রকল্পকে স্বীকৃতি দেয়ার অর্থ হচ্ছে সেখানকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে৷ গত কয়েকদিনে চারটি চাপাতি হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ মুক্তমনা অ‍্যাক্টিভিস্ট, লেখক, ব্লগার, শিক্ষক, সংখ‍্যালঘু – কেউই দেশটির কোথাও আর নিরাপদে নেই'', বলেন বন‍্যা আহমেদ৷
নাস্তিকের ধর্মকথা মনে করেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে গোটা বিশ্বের মানুষকে সচেতন করার সময় এসেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘দ‍্য বব্স অ্যাওয়ার্ডের জন্য আমাদের তথ‍্যচিত্র নির্বাচিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার পথ আরো সুগম হলো৷ আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে বাস্তবে বাংলাদেশের জনগণের ধর্ম, বিশ্বাস, মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামে বব্স কর্তৃপক্ষ শামিল হলেন৷ তাদেরকে সে কারণে আমরা বাংলাদেশের সংগ্রামী মুক্তমনা লেখক, ব্লগার, প্রকাশকদের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই৷''


বাংলাদেশের তথ্যচিত্র জিতল ‘দ্য বব্স’ অ্যাওয়ার্ড’


Jury
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার একটি বিভাগে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছে ভিডিও তথ্যচিত্র ‘‘রেজর’স এজ’’৷ বাংলাদেশে ব্লগার এবং অ্যাক্টিভিস্টদের উপর ধারাবাহিক হামলা নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রটিতে দেখানো হয়েছে কীভাবে রাজনীতিবিদরা এ সব হামলার পেছনে উৎসাহ জোগাচ্ছেন৷
দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় এ বছর চারটি ক্যা্টাগরিতে জুরি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ সোমবার বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বব্স-এর জুরিমণ্ডলী চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন৷ প্রতিযোগিতার ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ বা নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ব্লগার হত্যা নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র ‘‘রেজর’স এজ’’৷
‘নাস্তিকের ধর্মকথা’ ছদ্মনামে ব্লগ লেখা একজন ব্লগার এবং তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন৷ দ্য বব্স অ্যাওয়ার্ড জেতায় উচ্ছ্বসিত এই ব্লগার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডকুমেন্টারিটি আমাদের কাছে, কেবলই একটি ডকুমেন্টারি বা শিল্প প্রচেষ্টা নয়, বরং অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যম৷ বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে একের পর এক মুক্তমনা, নাস্তিক, সেক্যুলার লেখক, ব্লগার, প্রকাশক হত্যার মহোৎসব শুরু হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটকে আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি এর মাধ্যমে৷’’
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় চলতি বছর বাংলা ভাষার বিচারক ছিলেন ব্লগার বন্যা আহমেদ৷ গতবছর ঢাকায় মৌলবাদীদের হামলায় গুরুতর আহত এই ব্লগার বলেন, ‘‘পরপর দু’বছর বাংলাদেশের ব্লগারদের প্রকল্পকে স্বীকৃতি দেয়ার অর্থ হচ্ছে সেখানকার পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি৷ বরং অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে৷ গত কয়েকদিনে চারটি চাপাতি হামলার ঘটনা ঘটেছে৷ মুক্তমনা অ‍্যাক্টিভিস্ট, লেখক, ব্লগার, শিক্ষক, সংখ‍্যালঘু – কেউই দেশটির কোথাও আর নিরাপদে নেই৷’’ গত বছর এই অ্যাওয়ার্ড জয় করেছিল ঢাকায় খুন হওয়া লেখক অভিজিৎ রায়ের মুক্তমনা ব্লগ৷
দ্য বব্স প্রতিযোগিতার দ্বাদশ আসরের অন্যান্য ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ীরা হচ্ছেন প্রগতির জন্য প্রযুক্তি বিভাগে ইরানের অ্যাপ ‘গেরশাদ’, সামাজিক পরিবর্তন বিভাগে ভারতের অ্যাসিড হামলা বিরোধী প্রচারণা, শিল্প এবং সংস্কৃতি বিভাগে জার্মানির ‘সেন্টার ফর পলিটিক্যাল বিউটি’৷
এছাড়া, শিল্প এবং সংস্কৃতি বিভাগে অনলাইন ব্যবহারকারীদের ভোটে ‘ইউজার অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী জিএমবি আকাশের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট৷ আর বাংলা ভাষা বিভাগে ‘ইউজার অ্যাওয়ার্ড’ জিতেছে ‘জার্মান প্রবাসে’ ওয়েবসাইট৷ চলতি বছর একলাখের বেশি অনলাইন ভোট গণনা করা হয়৷
দ্য বব্স বিজয়ী প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ বলেন, ‘‘ডয়চে ভেলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে বাকস্বাধীনতাকে উৎসাহ দিচ্ছে৷ দ্য বব্স প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা বাকস্বাধীনতা রক্ষার বৈচিত্র্যময় এবং মহৎ বিভিন্ন উদ্যোগকে স্বীকৃতি দিচ্ছি৷ বিজয়ী এ সব উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে৷ কাজের ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকলেও এ সব উদ্যোগ মূলত নিপীড়িত মানুষদের সহায়তায় কাজ করছে৷’’
উল্লেখ্য, চলতি বছর দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় ২,৩০০ মনোনয়ন জমা পড়ে৷ এগুলোর মধ্য থেকে ১২৬টি প্রকল্পকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়, যার মধ্য থেকে চারটি প্রকল্প জয় করে জুরি অ্যাওয়ার্ড৷ আগামী জুন মাসে জার্মানির বন শহরে অনুষ্ঠিতব্য গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে ‘জুরি অ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে৷


নাস্তিক ব্লগার হত্যা নিয়ে বিশেষ তথ্যচিত্র

বাংলাদেশে মুক্তমনা, নাস্তিক ব্লগার হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি বিশেষ ভিডিও তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছেন একজন ব্লগার৷ ‘‘রেজর’স এজ’’ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া জাগিয়েছে৷
বাংলাদেশে ব্লগার হত্যা রোধে সরকার, নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠেছে৷ বিশেষ করে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিন্দা জানাননি, যা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল অনেকের মনে৷
সেক্যুলার আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতেই গতবছর খুন হয়েছেন চারজন ব্লগার এবং এক প্রকাশক৷ আর এ সব হামলায় নিন্দার ঝড় উঠেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে৷ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে অসংখ্য প্রতিবেদন৷ কিন্তু ঠিক কী কারণে এ সব হত্যাকাণ্ড, কারা এ সব ঘটাচ্ছে, কারা মদদ দিচ্ছে সেসব বিষয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা থেকেই গিয়েছিল৷
সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিও তথ্যচিত্র সেই অস্পষ্টতা কাটিয়ে দিয়েছে৷ আঠারো মিনিটের ভিডিও তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রধানদের মধ্যে ব্লগার হত্যা ইস্যুতে অবস্থানগত মিল রয়েছে৷ উভয়েই ইসলাম ধর্মের কোনোরকম সমালোচনার বিপক্ষে৷ ফলে ব্লগার হত্যার নিন্দা জানানো কিংবা মুক্তমনা ব্লগারদের পক্ষে কোনোরকম বক্তব্য প্রকাশে নারাজ তারা৷
ভিডিওচিত্রে ধর্মীয় মৌলবাদীদের নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷ উগ্রপন্থি ধর্মীয় নেতারা ব্লগার হত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে, এমন বক্তব্যও রয়েছে এতে৷ পাশাপাশি জীবনের শঙ্কায় থাকা ব্লগারদের মতামতও রয়েছে ভিডিওচিত্রে৷
ব্লগার ‘নাস্তিকের ধর্মকথা' ভিডিওচিত্রটি তৈরি করেছেন৷ গতমাসে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে এক অনুষ্ঠানে ‘‘রেজর'স এজ'' প্রদর্শন করা হয়৷ বর্তমানে এটির একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ ইউটিউবেও রয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ভিডিও তথ্যচিত্র প্রকাশের পর আশাব্যঞ্জক সাড়া পাচ্ছি৷ বিশেষ করে মুক্তমনা, সেক্যুলার লেখক, ব্লগার, অ্যাকটিভিস্টরা ‘ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট' ফিল করেছেন, অনেকেই জানিয়েছেন দেখতে দেখতে কেঁদেছেন৷’’
নাস্তিকের ধর্মকথা একটি ছদ্মনাম৷ এর পেছনের মানুষটি বর্তমানে নির্বাসনে রয়েছেন৷ কেননা তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে, একাধিক হিটলিস্টেও উঠে এসেছে তাঁর নাম৷ মুক্তমনা, মানবতাবাদী এই ব্লগার ভিডিও তথ্যচিত্রে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য প্রকাশ সম্পর্কে বলেন, ‘‘অনেকেই প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য পাশাপাশি দেখানো নিয়ে কথা বলছেন, বলেছেন বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে পত্রিকায় তাদের বক্তব্য পড়েছেন, কিন্তু এখানে সরাসরি তাদের কন্ঠে এই বক্তব্য শুনে রিয়ালাইজ করতে পারছেন এই ভয়ানক পরিস্থিতির পেছনে আমাদের নষ্ট রাজনীতি কতখানি দায়ী৷''
‘‘রেজর'স এজ''-এর একটি সমালোচনার কথাও জানিয়েছেন নাস্তিকের ধর্মকথা৷ কেউ কেউ নাকি বলছেন, ভিডিও তথ্যচিত্রটি দেখে মনে হয়েছে এতে ব্লগার হত্যার পেছনে মূলত ইসলামকে দায়ী করা হয়েছে৷ ইউরোপে নির্বাসনে থাকা নাস্তিকের ধর্মকথা এক পোস্টে এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘আমি কেবল দেখাতে চেয়েছি – আজ যে হত্যার মহোৎসব শুরু হয়েছে – সেটা ইসলামের নাম করে হচ্ছে এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এ রকম প্রকাশ্য হত্যার হুমকির চাইতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে অধিক গুরুতর অপরাধ!''
নাস্তিকের ধর্মকথা জানিয়েছেন, তাঁর তৈরি মূল ভিডিও তথ্যচিত্রটির দৈর্ঘ্য এক ঘণ্টার মতো৷ তবে ব্লগারদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সেটা আপাতত প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি৷ নাস্তিকের ধর্মকথা বলেন, ‘‘যেদিন এই ডকুমেন্টারিতে অংশ নেয়া সবাই যেদিন নিরাপদ জায়গায় যেতে পারবেন কিংবা যেদিন বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিরাপদ দেশে পরিণত হবে – সেদিন এটি অবিকল উন্মুক্ত করবো৷''



দ্য বব্স

‘প্রধানমন্ত্রী নাস্তিক-মুক্তমনাদের হত্যার বৈধতা দিলেন'

ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশত্যাগী একজন ব্লগার৷ তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ব্লগারদের বিপদ বাড়াচ্ছে৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘মুক্তচিন্তার নামে কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া বিকৃত রুচি ও নোংরা রুচির পরিচয়৷'' পাশাপাশি তিনি এ ধরনের লেখালেখির কারণে হামলার শিকার হলে তার দায় সরকার নেবে না বলেও জানিয়েছেন৷
সামাদ হত্যার পর সরকারের অবস্থান
সর্বশেষ ঢাকায় অ্যাক্টিভিস্ট নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যাকাণ্ডের পর এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী৷ সামাদ ছিলেন একজন নাস্তিক এবং গত ৬ এপ্রিল ঢাকায় তাঁকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয়৷ ফেসবুকে ইসলাম ধর্মের সমালোচনামূলক একাধিক পোস্ট করেছিলেন তিনি, যেগুলাকে হত্যার কারণ হিসেবে দেখিয়ে টুইটারে তার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আনসার আল-ইসলাম৷
বর্তমানে ইউরোপে নির্বাসিত ব্লগার ‘নাস্তিকের ধর্মকথা' বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর ধর্ম সম্পর্কে কেউ যদি লেখে তাহলে তিনি তা বরদাশত করবেন না! এটি সরাসরি চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সরাসরি হুমকি৷''
‘নাস্তিকের ধর্মকথা' একটি ছদ্মনাম৷ এই নামে লেখালেখি করলেও উগ্রপন্থিদের কাছে তাঁর পরিচয় গোপন থাকেনি৷ বরং একাধিক ‘হিট লিস্টে' তাঁর নামে প্রকাশ হয়েছে৷ ফলে এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্বৃত করে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ধর্মের বিরুদ্ধে ‘নোংরা' কথা বললে যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়, তবে তার দায় সরকার নেবে না৷ বাস্তবিক অর্থে এই কথাটি বলার মধ্য দিয়ে সরকার এ পর্যন্ত ঘটা নাস্তিক-মুক্তমনাদের সমস্ত হত্যাকাণ্ড, আক্রমণের বৈধতা দিলেন এবং ভবিষ্যতেও নাস্তিকদের যাতে একের পর এক খুন করা হয় – সে ব্যাপারে আমন্ত্রণ, উৎসাহ ও আহ্বান জানালেন৷''
দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় ‘‘রেজর'স এজ''
‘নাস্তিকের ধর্মকথা' সম্প্রতি একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছেন, যা ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার ‘নাগরিক সাংবাদিকতা' বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে৷ এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘দ্য ববস প্রতিযোগিতায় ‘‘রেজর'স এজ''-এর মনোয়ানায়ন পাওয়া আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা৷ এই ডকুমেন্টারি আমার কাছে যতখানি না একটি ডকুমেন্টারি, তার চাইতেও এটি আমার কাছে একটিভিজমের মাধ্যমে৷''
মূলত, বাংলাদেশে কি চলছে তা বিশ্বকে দেখিয়ে দেয়া এবং এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের উপরে চাপ প্রয়োগ করার জন্য ও সংকটে থাকা ব্লগারদের পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্যে বিশ্ববাসীকে আহবান জানানোর উদ্দেশ্যে তথ্যচিত্রটি তৈরি করেছেন নাস্তিকের ধর্মকথা৷ ইতোমধ্যে তা বিশ্বের একাধিক দেশে একাধিক ফোরামে প্রদর্শিত হয়েছে৷ পাশাপাশি ইউটিউবেও ভিডিওটির একাধিক সংস্করণ রয়েছে৷
মুক্তমনা এই ব্লগার বলেন, ‘‘দ্য ববস প্রতিযোগিতায় এই ডকুমেন্টারির মনোনায়ন পাওয়ার মাধ্যমে আরো অনেক মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে৷ বস্তুত এর মাধ্যমে ডিডাব্লিউ বা ‘দ্য ববস' আমার অ্যাক্টিভিজমের পাশে দাড়াঁলো ও অংশীদার হলো, আমি এভাবেই দেখছি৷ সে জন্যে তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ৷''
দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় ‘‘রেজর'স এজকে'' ভোট দিতে ক্লিক করুন এখানে৷ খেয়াল রাখবেন, ভোট দেয়ার আগে প্রথমে ওয়েবসাইটটিতে ‘লগ-ইন' করতে হবে৷ আর ‘লগ-ইন' অপশন পাবেন সাইটটির উপরের দিকে৷ সেখানে থাকা ফেসবুক বা টুইটার বাটনে ক্লিক করে লগ-ইন করুন৷ এরপর ‘নাগরিক সাংবাদিকতা' বিভাগ এবং ‘‘রেজর'স এজ'' বাছাই করে টিপে দিন ভোট বাটন৷ প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার ভোট দেয়া যায়৷


মৌলবাদের চাপাতিতে আক্রান্ত মুক্তমনা বাংলাদেশিদের নিয়ে তথ্যচিত্র ‘রেজর’স এজ’ পেলো দ‍্য বব্স এর নাগরিক সাংবাদিকতা পুরষ্কার

রেজর’স এজ দেখছেন দর্শকরা, ছবি DW.
একের পর এক নাস্তিক, মুক্তমনা ব্লগার, লেখক, প্রকাশ, সংস্কৃতিকর্মী, মানবাধীকার কর্মী, সচেতন মানুষদের নিয়ম করে হত্যা করা হচ্ছে বাংলাদেশে। একদিকে ইসলামি জঙ্গিদের চাপাতির আক্রমণ অন্যদিকে সরকারের হত্যার ব্যাপারে উদাসীনতা, নিহতকে দায়ি করে মন্তব্য প্রদান, ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে উলটো আক্রান্তকে আরও বেশি আক্রান্ত করা আজ বাংলাদেশের প্রতিটি দিন। মুক্তমনা লেখক নাস্তিকের ধর্মকথা বাংলাদেশের নিহত, আক্রান্ত মুক্তমনা মানুষদের কথা, তাদের উপর হামলার কারণ, সরকারের দায়হীনতা নিয়ে তৈরি করেছিলেন তথ্যচিত্র “রেজর’স এজ”। তথ্যচিত্রটি ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স প্রতিযোগিতায় ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ বা নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে-
ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স প্রতিযোগিতায় এ বছর চারটি ক‍্যাটাগরিতে জুরি অ‍্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ সোমবার বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে বব্সের জুরিমণ্ডলী চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন৷ প্রতিযোগিতার ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ বা নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ব্লগার হত‍্যা নিয়ে তৈরি তথ‍্যচিত্র ‘‘রেজর’স এজ৷” বাংলাদেশে মুক্তমনাদের উপর ক্রমাগত হামলা নিয়ে তৈরি ভিডিও তথ‍্যচিত্রটি ইতোমধ‍্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেছে৷
চরম নিরাপত্তাহীনতার মুখে দেশ ছাড়া ‘নাস্তিকের ধর্মকথা’ পুরষ্কার লাভের পর ডয়চে ভেলকে বলেছেন-
ডকুমেন্টারিটি আমাদের কাছে, কেবলই একটি ডকুমেন্টারি বা শিল্প প্রচেস্টা নয়, বরং অ্যাক্টিভিজমের মাধ্যম৷ বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে একের পর এক মুক্তমনা, নাস্তিক, সেক্যুলার লেখক, ব্লগার, প্রকাশক হত্যার মহোৎসব শুরু হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটকে আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি এর মাধ্যমে৷
রেজর’স এজ নিয়ে পড়ুন মুক্তমনায় নাস্তিকের ধর্মকথার লেখা।
মুক্তমনা পরিবারের পক্ষ থেকে নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে জুরি পুরষ্কার অর্জন করায় নাস্তিকের ধর্মকথাকে অভিনন্দন।

ব্লগার হত্যা নিয়ে তৈরি তথ‍্যচিত্র ‘রেজর’স এজ’ পেল আন্তর্জাতিক নাগরিক সাংবাদিকতা পুরষ্কার

একের পর এক নাস্তিক, মুক্তমনা ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, সংস্কৃতিকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সচেতন মানুষদের সিরিয়াল কিলিং করা হচ্ছে বাংলাদেশে। একদিকে ইসলামি জঙ্গিদের চাপাতির আক্রমণ অন্যদিকে সরকারের হত্যার ব্যাপারে উদাসীনতা, নিহতকে দায়ি করে মন্তব্য প্রদান, ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে উল্টো আক্রান্তকে আরও বেশি আক্রান্ত করা আজ বাংলাদেশের প্রতিটি দিন। মুক্তমনা লেখক 'নাস্তিকের ধর্মকথা' বাংলাদেশের নিহত, আক্রান্ত মুক্তমনা মানুষদের কথা, তাদের উপর হামলার কারণ, সরকারের দায়হীনতা নিয়ে তৈরি করেছিলেন তথ্যচিত্র “রেজর’স এজ”। তথ্যচিত্রটি ডয়চে ভেলের দ‍্য বব্স প্রতিযোগিতায় ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ বা নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে পুরস্কার জিতেছে।

ডয়েচে ভেলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে-
"ডয়েচে ভেলের দ‍্য বব্স প্রতিযোগিতায় এ বছর চারটি ক‍্যাটাগরিতে জুরি অ‍্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ সোমবার বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ববস'র জুরিমণ্ডলী চূড়ান্ত বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন৷ প্রতিযোগিতার ‘সিটিজেন জার্নালিজম’ বা নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে পুরস্কার জিতেছে ব্লগার হত‍্যা নিয়ে তৈরি তথ‍্যচিত্র 'রেজর’স এজ'। বাংলাদেশে মুক্তমনাদের উপর ক্রমাগত হামলা নিয়ে তৈরি ভিডিও তথ‍্যচিত্রটি ইতোমধ‍্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া ফেলেছে"৷

অব্যাহত প্রাণনাশের হুমকীর কারণে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়া ‘নাস্তিকের ধর্মকথা’ পুরষ্কার লাভের পর ডয়েচে ভেলেকে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে-
"ডকুমেন্টরিটি আমাদের কাছে, কেবলই একটি ডকুমেন্টরি বা শিল্প প্রচেষ্টা নয়, বরং অ্যাক্টিভিজমের একটি মাধ্যম৷ বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে একের পর এক মুক্তমনা, নাস্তিক, সেক্যুলার লেখক, ব্লগার, প্রকাশক হত্যার মহোৎসব শুরু হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটকে আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি এর মাধ্যমে"


'রেজর’স এজ' নিয়ে মুক্তমনা ব্লগে প্রকাশিত নাস্তিকের ধর্মকথার লেখাটি এখানে ক্লিক করে পড়তে পারেন।

ইউটিউবে ডকুমেন্টরির অনলাইন সংস্করণটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

নবযুগ পরিবারের পক্ষ থেকে ডয়েচে ভেলের নাগরিক সাংবাদিকতা বিভাগে জুরি পুরস্কার অর্জন করায় নাস্তিকের ধর্মকথাকে অভিনন্দন।

 

Bangladesh documentary on blogger murders wins The Bobs award


 

In 2013 Muslim extremists in Bangladesh published a deathlist with 84 atheist bloggers. Since then they killed five atheist bloggers, four in 2015 alone, as well as a secular publisher. Others have been attacked but survived. Dozens of bloggers have been forced into hiding or exile, part of them fled the country. Nastiker Dharmakatha is one of them. He made Razor’s Edge, a film about what happened to him and other bloggers and to his country, in terms of rising terror by Islamist Extremists.
What is happening to your country?
Bangladesh is a small country in South Asia. Though 90% of her population of 160 million people is Muslim, it has a long tradition of secularism and communal harmony. After a bloody war with Islamist Pakistan Bangladesh emerged in 1971 as an independent secular country. But secularism was removed from the constitution in 1979, Islam was made the state religion in 1988 and in  2011 we got a peculiar mixture of “secularism” and “state religion Islam” in! All these developments had dire consequences for our country. A small but growing number of people consider themselves non-believers or atheists. Among them are activists, writers and bloggers, like me,  who write about free thought, secularism, human rights and pluralism. Now that islamist extremism is gaining power, oppressing free thought, we sometimes criticize political- Islamism and the governments’ failure to counter that. Since 2013 atheists have been attacked and murdered by extremists, while the government leaves them unprotected, or even arrests them for "hurting religious sentiments".
What is the film about?
The film shows Muslim leaders preaching violence against atheists, and interviews with persecuted humanist bloggers.  All of them are on the deathlist and have been threatened or attacked by extremists. I decided to publish a short (18 minutes) anonymized version, for public use. Showing the whole film- 65 minutes- online, with many more interviews, would be too dangerous for the people in it, who are still target for the killers. So I hid their faces with anonymous’ masks and don’t disclose any names.
What happened to you?
In 2015, Avijit Roy was first killed, then after we lost our blogger colleagues Washikur Babu, Ananta Bijoy Dash, Niloy Neel and publisher Faisal Arefin Dipan, within 7 to 8 months. Life seemed so helpless in the carnival of blogger killings. We were feeling like insects, in fear, sorrow and anger. Family, relatives and friends were so worried that I imposed censorship on myself. With apologies to my family, I finally decided to flee my country. Leaving one’s own home land always hurts; to me it feels like a defeat: I left my beloved country to those Islamic extremists! That feeling is always hurting me.
Why did you make this film?
I am an independant filmmaker. In 2015 I started working on two documentaries: one on environmental issues, another about an indigenous woman. But soon the year 2015 became totally horrifying to me. Since writer Avijit Roy was hacked to death, on 26th of February I have been chased by nightmares. I had to stop all my activities other than my profession. Gradually I was bound to be caged inside the four walls of my home and office.
In this situation, the documentary was born. For a long time I had not been writing or making anything. I can’t concentrate on politics, history, philosophy, religion- the topics of my interest. At first I couldn’t write on Avijit Roy, Ananta Bijoy, Niloy Neel either. The horrifying pictures haunted me whenever I tried to write something about them.  But whenever I dìd write since 26th of February it has always been on the blogger killings, the rise of Islamism and the inertness of our government to protect us or to stop extremism. I cannot think or write about anything else.  So, naturally RAZOR’S EDGE is about: How are the enlisted atheist bloggers and writers, the ones who were attacked, the family members? How has this soil become so unlivable for atheist writers and bloggers? I show the rise of Islamic extremism in the present context and try to find who are mostly responsible. Politics? People? Intellectuals of Bangladesh? Cultural activists?
Our rivers have all been drying and dying, in the same way our culture has been drying. Extremists are coming like a flood and we are washed away like tiny leaves. RAZOR’S EDGE tells about all this. W. Somerset Maugham’s novel ‘RAZOR’S EDGE’is about trauma. My documentary is about the trauma of Bangladeshi atheist writers, and of all people who love peace and democracy. Important is not how powerful the RAZORS are or how sharp the EDGE is. Important is that- if we think that our civilization needs to advance- we must get rid of this trauma, this RAZOR’S EDGE.
It's the ‘Humanistisch Verbond’(Dutch Humanist Association) that has been with me from the very beginning. They supported my idea and proposal for this documentary, helped as co-producer with editing facilities by their broadcasting corporation HUMAN and arranged for the first viewing of this documentary, in a preliminary version, in an influential meeting with the Dutch Human Rights’ Ambassador and members of Dutch parliament. With the target of this viewing in mind we actually started working seriously for this documentary.
How do you see the future?
Still there’s hope. Civilization advances despite all its obstacles. RAZOR’S EDGE ends with this hope and dreams, with a tribute to all our friends who were killed for it:  Humayun Azad, Ahmed Rajib, Avijit Roy, Washiqur Babu, Ananta Bijoy Niloy Neel and Faisal Arefin Dipan
As long as the situation in Bangladesh hasn’t been changed, I will continue my journey with this documentary. So far I have made different long and short versions and shown them in Europe to different audiences. I hope to gather awareness and support for the struggle in Bangladesh, which is the struggle of many countries and individuals in this world.

Stem op Razor's Edge!

7 april 2016 Razor's Edge, de documentaire van gevluchte Bengaalse blogger Nastiker Dharmakatha, is genomineerd voor de online activisme prijs, de zogenaamde Bobs, van publieke omroep Deutsche Welle.
Stem op Razor's Edge!
De documentaire gaat over het islamitisch-extremistisch geweld tegen humanistische bloggers in Bangladesh. We zien de oproep van extremistische moslims in Bangladesh om atheïsten te doden. Alleen in 2015 zijn vijf bloggers en een uitgever vermoord. Gisteren werd opnieuw een blogger vermoord, de 28-jarige student Nazimuddin Samad.
De documentaire toont interviews met bloggers die vanwege hun werk bedreigd worden, of al aangevallen.
De Duitse publieksomroep Deutsche Welle reikt deze prijzen elk jaar uit. Meer dan 2300 websites en onlineprojecten vanuit de hele wereld zijn voorgedragen voor de nominaties voor de Bobs van dit jaar. Een internationale jury heeft een shortlist gemaakt van 126 finalisten in 14 talen en verschillende categorieën: Sociale verandering, 'Tech for Good', Kunst en cultuur en burgerjournalistiek. Razor's Edge is genomineerd in de categorie burgerjournalistiek.
Nastiker: "Mijn film toont moslimleiders die geweld tegen atheïsten prediken en interviews met vervolgde humanistische bloggers. Allemaal staan ze  op de dodenlijst en zijn ze bedreigd of aangevallen door extremisten. Ze zijn ondergedoken of gevlucht. Ik kan niet de hele film van 65 minuten publiek maken, want dat zou te gevaarlijk zijn voor de meeste mensen die nog steeds doelwit zijn van de moordenaars." Lees het uitgebreide interview met Nastiker

Razor's Edge: schokkende maar hoopvolle film

31 maart 2016 Moslimextremisten in Bangladesh publiceerden in 2013 een dodenlijst met de namen van 84 atheïstische bloggers. Sindsdien zijn er zes bloggers en een seculiere uitgever vermoord. Nastiker Dharmakatha had zomaar de zevende dode kunnen zijn, maar hij vluchtte en maakte Razor's Edge: een schokkende, maar hoopvolle film. Een interview.
Door Paulien Boogaard

Wat is er met jou gebeurd?

"In 2015 werd schrijver Avijit Roy eerst gedood, daarna onze collega-bloggers Washikur Babu, Ananta Bijoy Dash, Niloy Neel en uitgever Faisal Arefin Dipan, allemaal binnen ongeveer 8 maanden. Anderen werden aangevallen, maar overleefden.Tientallen bloggers voelden zich gedwongen onder te duiken of het land te ontvluchten.
Het leven leek zo hulpeloos in dit 'carnaval' van moorden. We voelden ons als insecten: vol angst, verdriet en woede. Familie, verwanten en vrienden waren zo bang, dat ik mezelf censuur oplegde. Met verontschuldigingen aan mijn familie, besloot ik uiteindelijk mijn land te ontvluchten. Je eigen thuisland verlaten is altijd erg; voor mij voelt het als een nederlaag. Ik moest mijn geliefde land aan die islamitische extremisten overlaten! Dat besef doet voortdurend veel pijn."

Wat gebeurt er met je land?

"Bangladesh is een klein land in Zuid-Azië. Hoewel 90 procent van de bevolking van 160 miljoen moslim is, heeft het land een lange traditie van secularisme en harmonie.
Na een bloedige oorlog met het islamitische Pakistan, ontstond Bangladesh in 1971 als een onafhankelijke seculier land. Maar in 1979 werd secularisme uit de grondwet  geschrapt. En in 1988 werd de islam de staatsgodsdienst. Daarna, in 2011  kregen we een eigenaardige mengeling van 'secularisme' en islam als staatsgodsdienst!
Al deze ontwikkelingen hadden ernstige gevolgen voor ons land.

Een klein maar groeiend aantal mensen beschouwt zichzelf als niet-gelovig en atheïst. Onder hen zijn activisten, schrijvers en bloggers, net als ik, die schrijven over vrij denken, secularisme, mensenrechten en pluralisme. Nu islamitisch extremisme meer invloed krijgt en het vrijdenken onderdrukt wordt, bekritiseren we soms
politiek-islamisme en de regering die faalt om dat tegen te gaan. Sinds 2013 hebben extremisten atheïsten aangevallen en vermoord, terwijl de regering de slachtoffers niet beschermt, of zelfs  juist arresteert voor 'het kwetsen van religieuze gevoelens'."

Waarom heb je deze film gemaakt?

"Ik ben een onafhankelijk  filmmaker. In 2015 begon ik te werken aan twee documentaires: één over milieukwesties, een ander over een inheemse vrouw. Maar al snel werd het jaar 2015 totaal afschuwelijk voor mij. Sinds schrijver Avijit Roy op 26 februari werd dood gehakt, werd ik achtervolgd door nachtmerries. Ik moest al mijn activiteiten, behalve mijn werk, stoppen. Gaandeweg heb ik mezelf moeten opsluiten binnen de vier muren van mijn huis en kantoor. Zo werd de documentaire geboren."

Waar gaat de film over?

"De film toont moslimleiders die geweld tegen atheïsten prediken en interviews met vervolgde humanistische bloggers. Allemaal staan ze  op de dodenlijst en zijn ze bedreigd of aangevallen door extremisten. Ze zijn ondergedoken of gevlucht. Ik kan niet de hele film van 65 minuten publiek maken, want dat zou te gevaarlijk zijn voor de meeste mensen die nog steeds doelwit zijn van de moordenaars. Maar ik heb  besloten een ​​korte 18 minuten durende versie online te zetten, waarin ik gezichten verborgen heb achter anonieme maskers. Van anderen heb ik de stem weggehaald. En ik maak geen namen bekend,"

Waarom de titel?

"Razor's Edge is het 'scherp van de snede’. De film vertelt hoe het gaat met de bedreigde atheïstische bloggers en schrijvers, met degenen die werden aangevallen, en de familieleden. Hoe is onze bodem zo onleefbaar geworden voor atheïstische schrijvers en bloggers? Ik laat de opkomst zien van islamitisch extremisme in de huidige context en  vraag me vooral af wie  verantwoordelijk is. De politiek? De bevolking? De intellectuelen van Bangladesh? De culturele activisten?
Onze rivieren drogen allemaal op en uit, droogt ook onze cultuur op? Extremisten komen als een vloedgolf en we zijn weggespoeld als kleine blaadjes. W. Somerset Maugham's roman 'Razor's Edge gaat over trauma. Mijn documentaire gaat over het trauma van Bengaalse atheïstische schrijvers, en van alle mensen die houden van vrede en democratie. Belangrijk is niet hoe krachtig de scheermessen zijn of hoe scherp de rand is. Belangrijk is dat, als we denken dat onze beschaving vooruit moet, we ons moeten ontdoen van dit trauma."

Hoe kwam je in contact met Omroep Human en het Humanistisch Verbond?

"Het Humanistisch Verbond heeft me vanaf het begin gesteund om deze documentaire te maken en werd co-producent. Omroep HUMAN heeft me heeft geholpen met editen.  Dat het Humanistisch Verbond me de gelegenheid bood een eerste versie te vertonen in een invloedrijke ontmoeting met de Nederlandse mensenrechtenambassadeur en de politiek, heeft ons het duwtje gegeven om serieus aan de slag te gaan met de documentaire."

Hoe zie je de toekomst?

"Er is hoop. De beschaving gaat voort ondanks alle obstakels. Razor's Edge  eindigt met deze hoop en dromen, met een eerbetoon aan al onze vrienden die vanwege hun idealen zijn gedood: Humayun Azad, Ahmed Rajib, Avijit Roy, Washiqur Babu, Ananta Bijoy Niloy Neel en Faisal Arefin Dipan.
Zolang de situatie in Bangladesh niet is veranderd, zal ik mijn pad met deze documentaire voortzetten. Tot dusver heb ik verschillende korte en lange versies gemaakt en ze in Europa getoond aan verschillende doelgroepen. Ik hoop bewustzijn te creëren en steun te krijgen voor de strijd voor vrijheid in Bangladesh. Dat is de strijd van vele landen en individuen in deze wereld."

“রেজর’স এজ”

২০১৫ সালটি ছিল বীভিষিকাময়। অথচ শুরু করেছিলাম সম্ভাবনা দিয়ে। একসাথে দুটো ডকুমেন্টারির কাজ শুরু করেছিলাম, একটি পরিবেশ- প্রতিবেশ আরেকটি আদিবাসী ইস্যুতে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখ থেকে দুঃস্বপ্ন তাড়া করে গেছে। সমস্ত কাজ বন্ধ করে, লেখালেখি বন্ধ করে- ধীরে ধীরে ঘরের চার দেয়ালের বন্দীজীবন বেছে নিতে বাধ্য হই। অভিজিৎ রায়কে দিয়ে শুরু, তারপরে একে একে ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাস, নিলয় নীল আর সর্বশেষ ফয়সাল আরেফিন দীপনকে আমাদের মাঝ থেকে হারাই। ব্লগার হত্যার মহোৎসবের মাঝে কুকড়ে যাওয়া জীবন, অনেকটা কীট পতঙ্গের মত, ভয়ে- ক্রোধে- অক্ষম ঘৃণায়- দিন যাপন, আর পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের উৎকণ্ঠার মাঝে নিজেকে আরো স্বেচ্ছাবন্দী করে ফেলা, নিজের উপরে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করা আর কন্ঠে, বুকে, চোখে ও মগজে বিশমনি পাথরের বোঝা চাপিয়ে দেয়া অক্ষম জীবন কাটানো- এই ছিল ২০১৫ সালের জীবন যাপন। পরিবার- সন্তানদের অযুহাত সামনে এনে- এবং আগে প্রাণে বাঁচতে পারলে দূরে থেকেও সংগ্রাম চালানো সম্ভব- এরকম কাপুরুষোচিত আত্মসান্ত্বনা মাথায় নিয়ে- শ্বাপদ হায়েনাদের হাতে দেশটাকে আরো অরক্ষিত করে- দেশত্যাগী যাযাবর জীবন বেছে নেয়া এবং আপাত নিরাপত্তার আস্বাদে কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেলা … এই তো ছিল, চলছিল! পরাজয়ের মনোভাব, বেদনা, দেশের চিরচেনা আবহাওয়া- সংস্কৃতিকে হারিয়ে খুজে ফেরা জীবনে- ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে যাওয়া সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ঘুনে ধরা- পচন ধরা- বোবা- মগজহীন প্রজন্ম, কলুষিত রাজনীতি- কোন কিছুই দেশত্যাগের সান্ত্বনা হয়ে দাঁড়ায় না, বরং ফেলে আসা দেশটার, প্রিয় মাতৃভূমির এমন অচেনা, কিম্ভূত পরিণতি প্রতি মুহুর্তে যন্ত্রণায় বিদ্ধ করে; ‘পারিনি’, ‘পারবোনা’, ‘কিছুই হলো না’, ইত্যকার ব্যর্থতাসূচক শব্দগুলো দেশটার অনিশ্চিত ও নিরাশাজনক ভবিষ্যতের জন্যে নিজেকে অপরাধী করে তোলে …
এরকমই একটি প্রেক্ষাপটে- ‘রেজর’স এজ’ ডকুমেন্টারির জন্ম। অনেকদিন ধরেই আমি লেখতে পারছি না, কিছু বানাতে পারছি না … আমার আগ্রহের জায়গা- সেই ইতিহাস, রাজনীতি, দর্শন, ধর্ম, শিল্প- এসব নিয়ে মনোসংযোগ করতে পারি না, শুরুতে অভিজিৎ রায়, অনন্ত, নীলয় নীলদের নিয়েও কিছু লেখতে পারতাম না- লেখতে গেলেই- বীভৎস ছবিগুলো মাথায় এসে ভর করতো, বোবা কান্না কলম বা কিবোর্ডকে আটকে ধরতো। তারপরেও এ সময়কালে যতখানি যা লিখেছি- তা এই বর্তমান পরিস্থিতি, জঙ্গীবাদের উত্থান, সরকার ও রাজনীতির ভূমিকা! এর বাইরে কিছু লেখতে পারি না, চিন্তাও করতে পারি না! ফলে- ফিল্ম মেকিং এর কথাও যখন মাথায় এসেছে- এই প্রসঙ্গ বা ইস্যুর বাইরে অন্য কিছুর কথা ভাবতে পারিনি! স্বভাবতই, ‘রেজর’স এজ’ নাস্তিক ব্লগার, লেখক, প্রকাশকদের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে চলমান কথিত ‘জিহাদ’ এর রোজনামচা! আক্রান্ত হওয়া ব্লগাররা, আক্রান্ত হওয়ার ভয়ের সাথে দিনকাটানো ব্লগাররা, খুন হয়ে যাওয়া ব্লগারদের স্বজনেরা, বন্ধুরা কেমন আছে? এই পলিমাটির দেশটি কিভাবে সামান্য কজন লেখকের জন্যে অবাসযোগ্য হয়ে উঠলো, তার অনুসন্ধান করা, মৌলবাদের উত্থানকে সমসাময়িক ফ্রেম থেকে ধরা, এবং দায় খোজা- রাজনীতির, গণমানুষের ও বুদ্ধিজীবি- সংস্কৃতিকর্মীদের দায় খোজা! নদীগুলো যেমন করে শুকিয়ে গেল, আমাদের সংস্কৃতিও শুকিয়ে মরলো, মৌলবাদী- জঙ্গীবাদী শক্তিগুলো বন্যার মতো করে উপচে পড়লো! ভেসে উড়ে কোথায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলাম আমরা … তারই গল্প এই ‘রেজর’স এজ’ …
এটি একটি চলমান প্রজেক্ট। এখন পর্যন্ত- ৬০ মিনিটের একটি ভার্সন তৈরি করতে পেরেছি। শুরুতে ১০ মিনিটের একটি ভার্সন এবং পরে ৪০ মিনিটের আরেকটি ভার্সনের দুটো শো হয়েছে- ইউরোপে। ৬০ মিনিটের ভার্সনের একটা মিনি অনলাইন ভার্সন মুক্তমনার জন্যে তৈরি করলাম। মিনি ভার্সন বললেও- এটাও ১৮ মিনিটের। সঙ্গত কারণেই- যারা এখনো বিপদের আশঙ্কা করেন এবং নিজ চেহারা ও পরিচয় উন্মুক্ত করতে চান না- তাদের সাক্ষাৎকার চেহারার বদলে- ‘এনোনিমাস’ মুখোশ বা অবয়বের আদলে দিয়েছি। কারোরই নামধাম ও ঠিকানা এখানে বলা হয়নি।
ছোট করে- এই ডকুমেন্টারির দুএকটি বিষয়ে আমার ব্যাখ্যাটি দেই। অনেকেই আপত্তি তুলেছেন- এক ওয়াজে বলা হুজুরের বয়ানঃ “ইসলাম বলেছে এদের টুকরো টুকরো করতে হবে”- এই লাইনটির পুনঃ পুনঃ ব্যবহারে। আমি কি ইসলামকে ডেমোনাইজিং করতে চেয়েছি? আমার জবাব হচ্ছে- না! আমার পুরো ডকুমেন্টারিতে কোথাও আমি জানাই নি বা আর্গুমেন্ট করিনি- আসলেই ইসলাম কি বলে? মুহাম্মদ সা এর কটুক্তকারীকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করতে চাওয়া ইসলাম সমর্থন করে কি করে না- সেটার অনুসন্ধানও আমার আগ্রহের বিষয় ছিল না! আমি কেবল দেখাতে চেয়েছি- আজ যে হত্যার মহোৎসব শুরু হয়েছে- সেটা ইসলামের নাম করে হচ্ছে এবং দেশের আইন শৃংখলাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এরকম প্রকাশ্য হত্যার হুমকির চাইতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে অধিক গুরুতর অপরাধ! এখানে নাস্তিক লেখক- প্রকাশকদের খুন করা- একটা বাস্তবতা, তার চাইতেও বড় বাস্তবতা হচ্ছে- এর বিরুদ্ধে বেশিরভাগ জনগণের নিশ্চুপ থাকা। লাখ লাখ মানুষ যখন নাস্তিকদের ফাসীর দাবিতে রাস্তায় নামে, সমস্ত রাজনৈতিক দল যখন এই ইসলামবাদীদের তোয়াজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে- সেই প্রেক্ষাপটে দেশের আনাচে কানাচে- ইসলামের কটুক্তকারীকে হত্যার নির্দেশ দেয়াটা – একটা নৈমত্তিক ব্যাপার এই দেশে! সেই বাস্তবতাটাকে আমি অস্বীকার করতে পারি না, যারা দিনরাতে এই টুকরো টুকরো করার বয়ান দেয়- তাদের সেই বয়ানে যে- অসংখ্য জিহাদী বান্দা চাপাতি শান দেয়ার জন্যে উদ্বুদ্ধ হবে- সেটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতাকে আমি অস্বীকার করতে পারি না- প্রতিটা হত্যাকান্ডেই, হত্যাকান্ডের বীভৎসতার ধরণে, আমার মাথায় এই টুকরো টুকরো করতে চাওয়া কানে বাজে! ঢাকার রাস্তায় কদাচ বের হলেও মুহুর্তে মুহুর্তে ভয়ে কেপে ওঠা- সেটাও ঐ টুকরো টুকরো করে ফেলার আতঙ্কেই! এই লাইন কটি আমার ব্যক্তিগত জীবনে- চলতে ফিরতে যে ট্রমা আমাকে উপহার দিয়েছে- সেটাই আমি ব্যবহার করেছি- এই ডকুমেন্টারিতে। এবং- যখনই কেউ তা সে রাজনীতির নেতাই হন আর মিলন- জাকির তালুকদার- তুষাড় টাইপের বুদ্ধি(প্রতিবন্ধী)জীবিই হন- তারা যখন- ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অপরাধকে সামনে এনে এই হত্যার মহোৎসবকে জায়েজ করেন- আমার মনে হয়- তাদের সেই আলাপ বা যুক্তির পাশে আসল অনুচ্চারিত কথাটাই হচ্ছে এই “টুকরো টুকরো করতে হবে” কথাতা। সেটাই আমি উল্লেখ করেছি- আমার ডকুমেন্টারিতে।
সামারসেট ম’মের উপন্যাস ‘রেজর’স এজ’ (https://en.wikipedia.org/wiki/File:The_Razor’s_Edge_1st_ed.jpg) থেকে আমার ডকুমেন্টারির নাম নিয়েছি। কমন জায়গাটা হচ্ছে- ট্রমা। সেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ফেরত এক পাইলটের ট্রমা- সেটা আমার এখানে- চাপাতীর আক্রমণের মুখে লেখকদের ট্রমা, দেশের গণতন্ত্রকামী- মুক্তিকামী সেক্যুলার মানুষদের ট্রমা। চাপাতি বা খুরের ধার বনাম কলমের কালি- কোনটি শক্তিশালী- এর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন- কোনটির প্রভাব কি? যদি মনে করি একটি সভ্যতা- মনুষ্যত্বকে পিছিয়ে নেয়, অপরটি এগিয়ে নেয়, তাহলে আমাদের মেনে নিতে হবে যে, চাপাতির ধারকে পরাস্ত করার আর কোন বিকল্প নাই- মনুষ্যত্বকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে।
ডকুমেন্টারি দেখে আপনাদের মতামত, মূল্যায়ন জানাবেন আশা করি। কাজটি আমাদের জন্যে মোটেও সহজসাধ্য ছিল না। ভয়ানক, প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে এগুতে হয়েছে। ভীষণ রিস্কের মধ্যে এর শ্যুটিং করা হয়েছে। দেশে ও বিদেশে শ্যুট করা সেই ফুটেজগুলোর একটা বড় অংশ হারিয়ে ফেলেছিলাম। ১০ মিনিটের প্রাথমিক একটি ভার্সন উদ্ধার করতে পেরে- প্রাথমিক শককে পেছনে ফেলে আবার কাজ শুরু করা। এবং একটা কাঠামো দেয়ার মত অবস্থায় যাওয়া। এবং এই ডকুমেন্টারিটি- হুমায়ুন আজাদ, আহমেদ রাজীব হায়দার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলয় নীল ও ফয়সাল আরেফিন দীপনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যমও বটে।
প্রিয় অভিজিৎ রায়ের হত্যার এক বছর- কিংবা প্রিয় হুমায়ুন আজাদের উপরের আক্রমণের এক যুগ- এরকম একটি ক্ষণেই ডকুমেন্টারিটির একটি ভার্সন পাবলিকলি প্রকাশ্য করার জন্যে যথার্থ। বন্যা আপার ভাষায় বলি- সভ্যতা আগায়, মানুষ আগায়, সমস্ত প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে আমরাও এগুবো নিশ্চয়ই …

No comments: