মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০০৮

নবীজী মুহম্মদ সা. এর বিয়েসমূহ এবং কিছু প্রশ্ন


নবীজীর ব হুবিবাহের পক্ষে যুক্তি করে বিভিন্ন সময়ে সাচ্চা মুসলমানদের নানারকম যুক্তি করতে দেখা যায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো ভুলে ও মিথ্যায় ভরা। সেরকম কিছু যুক্তি দেখেছিলাম আলামা ইউসুফ আল কারদাওয়ী ও আরো কয়েকজনের বিভিন্ন প্রবন্ধে। সেখানকার যুক্তি গুলো যাচাই করতে গিয়েই যে বিষয়গুলো ধরা পড়লো, তা নিয়ে এই প্রবন্ধটি সাজিয়েছি।

এক
এক জায়গায় একজনের আলোচনায় দেখলাম গড়পরতায় বলা হয়েছে:
"নবীজী সা: এর স্ত্রীদের দুজনের বয়স শুধু ৩৬ বছরের নীচে ছিল। বাকী স্ত্রীগনের বয়স ছিল ৩৬ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে"।

এটা যে একটি নির্জলা মিথ্যাচার তা নিচের তালিকা দেখলেই পরিষ্কার হবে।
 
৩৬ বছরের নীচের স্ত্রীদের তালিকাঃ(1)
১। আয়েশাঃ আয়েশাকে বিয়ে করেন ৬ বছর বয়সে (2) এবং আয়েশা মুহম্মদ সা এর ঘরে প্রবেশ করেন (বাসর হয়) ৯ বছর বয়সে। এমনকি বাচ্চা আয়েশার সাথে বন্ধুবর বা ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখা বয়স্ক মুহম্মদ সা এর বিয়ের প্রস্তাবে প্রথমে আবু বকর রা ও অবাক হয়েছিলেন এবং নবীজীকে প্রশ্ন ছুড়েছিলেন। (3)
 
২। হাফসাঃ হাফসা বিধবা হন ১৮ বছর বয়সে, উমর রা পর্যায়ক্রমে আবু বকর রা ও ওসমান রা কে প্রস্তাব পাঠালে তাঁরা উভয়েই হাফসা কে বিয়ে করতে অসম্মত হন কেননা তাঁরা জানতেন যে মুহম্মদ সা হাফসা কে বিয়ে করতে মনস্থির করেছেন (4)! অবশেষে মুহম্মদ সা যখন হাফসাকে বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল ২০ বছর
 
৩। সাফিয়াঃ খায়বরের যুদ্ধে সাফিয়ার (5) স্বামিকে হত্যা করে সাফিয়াকে বন্দী করা হয়। প্রথমে মালে গনীমতের ভাগাভাগিতে সাফিয়া অন্য এক সাহাবার ভাগে পড়েছিল। কিন্তু সাফিয়ার রূপের কথা ছড়িয়ে পড়লে, মুহম্মদ সা তাকে নিজের করায়ত্তে নেন এবং বিয়ে করেন। বিয়ের সময় সাফিয়ার বয়স ছিল ১৭ বছর
 
৪। জুহারিয়াঃ বনী মুস্তালকের যুদ্ধে গোত্র প্রধানের কন্যা জুহারিয়াকে গনীমতের মালের সাথে মদীনায় আনা হয়। বাবা মুক্তিপণ দিয়ে পাঠাতে চাইলেও মুহাম্মদ সা ফিরিয়ে দেন এবং জুহারিয়াকে বিয়ে করেন। তখন জুহারিয়ার বয়স ছিল ২০ বছর
 
৫। সালমাঃ সালমা ও তার স্বামী ইসলামের প্রথম যুগে ইসলাম গ্রহণকারী এবং যথেস্ট নির্যাতন সহ্যকারী। একসময় সালমা তার স্বামী সন্তানকেও হারিয়েছিলেন, সেখান থেকে অনেক কষ্ট স্বীকার করে তিনি স্বামী সন্তানের সাথে মদীনায় মিলিত হন (এই ঘটনা পড়লে বুঝবেন কতখানি ভালোবাসতেন তার স্বামীকে!)। উহুদের যুদ্ধে ওনার স্বামী খুব খারাপভাবে আহত হন এবং একসময় মৃত্যুবরণ করেন। স্বামী মারা যাবার মাত্র ৪ মাস ১০ দিন পরেই (৪ ইদ্দত পার হলে) সুন্দরী সালমাকে বিয়ে করার জন্য আবু বকর প্রস্তাব পাঠান, আবু বকরকে না করে দিলে এবারে উমর বিয়ে করার প্রস্তাব পাঠান। তাকেও না করে দেন। এবারে মুহম্মদ সা প্রস্তাব পাঠালে তিনি তার সন্তান-সন্ততির কথা সহ আরো কিছু আপত্তির কথা জানালেও মুহম্মদ সা কে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি! সালমাকে বিয়ে করার সময় বয়স ছিল ২৯ বছর।
 
৬। জয়নবঃ জয়নবকে বিয়ে করার সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর। (বিয়ের পর মাত্র ৮ মাস বেঁচে ছিলেন তিনি)।
 
এর বাইরে হাবিবার কথা বলা যায়। অবশ্য তাকে ওনার তালিকাতে রাখতেও আপত্তি নেই।
 
৭। হাবিবাঃ হাবশায় স্বামী সহ হিজরত করার পর স্বামী ইসলাম ত্যাগ করে খৃস্টান হয়ে গেলে স্বামীর সাথে তালাক হয়ে যায়। তখন মুহম্মদ সা দূত মারফত ১ হিজরী সনে হাবিবাকে বিয়ে করেন। তখন হাবিবার বয়স ছিল ২৯ বছর। তারো প্রায় ৬ বছর পরে হাবিবা মদীনায় আসেন এবং নবীজির ঘর করেন। যেসময় মদীনায় নবীর ঘরে আসেন সেসময় তার বয়স ছিল ৩৫।
 
১১ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জনের বয়স বিবাহ কালীন সময়ে ৩৬ উর্ধ্ব ছিল (যয়নবের বয়স অবশ্য ছিল ৩৫!)। আর নবী পত্নী মতান্তরে উপপত্নী মারিয়া ও রায়হানার কারোরই বয়স ২০/২২ বছর এর বেশী ছিল না।
 
 
দুই
অনেকেই যুক্তি করেন যে,
"তার দুটো বিয়েকেই শুধু স্বাভাবিক বিয়ে বলা যায়। বাকীগুলো ছিল মুলত সোসাল রিফর্ম কিংবা রাজনৈতিক কারনে"।
কোন দুটি বিয়ে স্বাভাবিক?
খাদিজার সাথে বিয়ে কি সোসাল রিফর্ম বা রাজনৈতিক কারণে?
সওদা ছিলেন মধ্যবয়স্ক ও বিধবা। সওদা কে বিয়ের পেছনে মূল কারণ হিসাবে জানা যায় মুহম্মদ সা এর সন্তানদের দেখাশুনা ও ঘর সামাল দেয়া। সেখানে রাজনৈতিক কারণ কি?
 
আয়শা ও হাফসা যথক্রমে আবু বকর রা ও উমর রা এর কন্যা। যেসময়ে বিয়ে করেন তখন আবু বকর ও উমর রা উভয়েই ইসলামের পরীক্ষিত সেনা। এখানে রাজনৈতিক কারণ কি? বা সোশাল রিফর্ম ই বা কি?
জয়নবকে (পালক পুত্রের স্ত্রী যয়নব না) বিয়ের পেছনে রাজনৈতিক বা সোশাল রিফর্ম কি?
 
মায়মুনা নিজে থেকে মুহম্মদ সা কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মায়মুনার এক বৈমাত্রীয় বোন জয়নবকে নবীজি আগেই বিয়ে করেছিলেন, অপর বৈমাত্রীয় বোন আসমা আবু বকরের স্ত্রী এবং আরেক বৈমাত্রীয় বোন সালমা 'আসাদুল্লাহ' হামজার স্ত্রী। সেকারণে মায়মুনাকে "আহলুল বায়েত" বলা হতো। মায়মুনাকে বিয়ে করায় কোথায় কি সোশাল রিফর্ম হয়েছে বা রাজনৈতিক কারণ ছিল?? মায়মুনার এক বোন নাজাদ গোত্র প্রধানের স্ত্রী ছিল ঠিকই, কিন্তু সেই নাজাদ গোত্র প্রধানের স্ত্রী তো জয়নব, আসমা, সালমারও বোন ছিলেন!!!
 
সালমার স্বামী মারা যাবার পরে তাকে বিয়ে করার পেছনে রাজনৈতিক কারণ কি ছিল? এই বিধবা বিয়ের মধ্য দিয়ে কি-ই বা সোশাল রিফর্ম হয়েছে?হাবিবার ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক কারণ কি ছিল? হাবশায় হিজরত করলেও পিতা আবু সুফিয়ান ইসলামের শত্রুতা কমান নি। এমনকি ১ম স্বামী ইসলাম ত্যাগ করার পরে নবিজি হাবিবাকে বিয়ে করার পরেও অসংখ্যা যুদ্ধে কোরায়েশদের আর্থিক সাহায্য করে গেছেন, হাবিবা মদীনায় সংসার শুরু করার পরেও আবু সুফিয়ান একই কাজ করে গেছেন। কেবল মক্কা বিজয়ের পরেই যখন কোরায়েশরা মুসলিম বাহিনীর করায়ত্ত হয় তখনই সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন।
 
খায়বরের যুদ্ধে আর বনী মুস্তালকের যুদ্ধে হস্তগত সাফিয়া ও জুহারিআর সাথে বিয়েকে আপনি রাজনৈতিক বলতে পারেন। কিন্তু একে চরম অন্যায় না বলার কোন কারণ দেখি না। যুদ্ধে পরাজিত পক্ষের নারীদের ধরে ধরে ভোগ করা, বন্দী করা, কৃতদাসী বানানো এসব খুবই ঘৃণ্য কাজ।
 
একই ভাবে পালক পুত্রের স্ত্রীকে তালাকের পরে বিয়ে করাটাকে সোশাল রিফর্ম বলতে পারেন, তবে সেই সোশাল রিফর্ম কেন জরুরী হলো কেউ কি বলবেন?
 
 
তিন
কারদাওয়ী বলেছেন,
"চিন্তা করে দেখুন রাসুল সা. যদি চারজন স্ত্রী রেখে অন্যদের তালাক দিতেন তবে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদের বাকী জীবন অন্যকোন পুরুষের সাথে নিষিদ্ধ হতো। ফলে বাকী জীবন তাদেরকে স্বামীবিহীন অবস্থায় কাটাতে হতো। ..."

খাদীজার মৃত্যুর পরেই মুহম্মদ সা বাকি বিয়ে গুলো করেন - মূলত ৫৩ থেকে বছর থেকে ৬০ মতান্তরে ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত। মুহম্মদ সা এর জন্য নতুন বিয়ে নিষিদ্ধ করে আয়াত আসে ওনার ৬০ বছর বয়সে, সে হিসাবে মায়মুনাই ওনার শেষ স্ত্রী হওয়ার কথা। মুহম্মদ সা মৃত্যুবরণ করেন ১১ হিজরীতে ৬৩ বছর বয়সে, মানে ৩ বছর পরেই। ফলে ৬০ বছর বয়সে ৪ জনকে রেখে বাকিদের তালাক দিয়ে দিলে স্ত্রীরা সঙ্গীহীন অবস্থায় অতিরিক্ত ৩ বছর কাটাতো। সঙ্গীহীন অবস্থায় যতটা ওনারা এমনিতেই কাটিয়েছেন- তার তুলনায় এই ৩ বছর মনে হয় নগণ্যই!!

 
এক পলক দেখি কে কত বছর সঙ্গীহীন কাটিয়েছেন?(6)
 
সওদাঃ মৃত্যুবরণ করেন ৫৩ হিজরীতে। মানে ৪২ বছর সঙ্গীহীন কাটিয়েছেন।
 
আয়শাঃ ১১ হিজরীতে বয়স ১৬ বছর। মৃত্যুবরণ করেন ৫৮ হিজরীতে ৬৩ বছর বয়সে। মানে বিধবা অবস্থায় কাটান ৪৭ বছর।
 
হাফসাঃ ১১ হিজরীতে বয়স ২৭ বছর। মৃত্যবরণ করেন ৪৫ হিজরীতে ৬১ বছর। মানে ৩৪ বছর বিধবা অবস্থায় কাটিয়েছেন।
 
সালমাঃ ১১ হিজরীতে বয়স ৩৫, মৃত্যুবরণ করেন ৬১ হিজরীতে ৮৫ বছর বয়সে। মানে বিধবা অবস্থায় সঙ্গীহীন কাটাতে হয়েছে ৫০ বছর।
 
যয়নবঃ ১১ হিজরীতে বয়স ৪০, মৃত্যুবরণ করেন ২০ হিজরীতে ৫০ বছর বয়সে। মানে সঙ্গীহীন থাকেন ১০ বছর।
 
জুহারিআঃ ১১ হিজরীতে বয়স ২৬ বছর, মৃত্যুবরণ করেন ৫০ হিজরীতে ৬৫ বছর বয়সে। মানে বিধবা অবস্থায় কাটান ৩৯ বছর।
 
হাবিবাঃ ১১ হিজরীতে বয়স ৩৯ বছর। মৃত্যুবরণ করেন ৪৪ হিজরীতে ৭২ বছর বয়সে। মানে ৩৩ বছর সঙ্গীহীন কাটান।
 
সাফিয়াঃ ১১ হিজরীতে বয়স ২১ বছর। মৃত্যুবরণ করেন ৫০ হিজরীতে ৬০ বছর বয়সে। মানে বিধবা অবস্থায় কাটান ৩৯ বছর।
 
মায়মুনাঃ ১১ হিজরীতে বয়স ছিল ৪০ এবং ৮০ বছর বয়সে ৫১ হিজরীতে মারা যান, তার মানে বিধবা অবস্থায় ৪০ বছর একা কাটিয়েছেন।
 
খাদিজা ও জয়নব মুহম্মদ সা এর জীবদ্দশায় মারা যান। সওদা মুহম্মদ সা এর ওফাতের ৫ বছর পরে ও মারিয়া কিবতিয়া ১ বছর পরেই মারা যান।
 
উপরের এই তালিকা উল্লেখের আরেকটি গুরুত্ব আছে তা হলোঃ এটাই যে মুহম্মদ সা যেসকল নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তাদের প্রতি কতখানি অবিচার করা হয়েছে তা বুঝা। নবীজীর বিয়েগুলোর মধ্যে অধিকাংশই বিধবা বিয়ে। তারমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে নবীজী ২য় নন, ৩য় স্বামী। অনেকে ৩৫/৪০ বছর বয়সে এসেও নবীকে বিয়ে করেছেন। অন্য সাহাবীদের খোঁজ নিলেও দেখা যায় ওনাদের বিয়ের মধ্যেও বিধবা বিবাহ আছে। সুতরাং,বলা যায়আরবে এই বিদঃবা বিয়ে একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক চল ছিল। যেমন খাদিজা নিজেই ৪০ বছর বয়সে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন, তেমনি অনেক বিধবাই নতুন বিয়েতে আগ্রহী ছিলেন। অথচ, নবীজী শেষ বয়সে কম বয়স্ক নারীদের বিয়ে করে সেই নারীদের জীবনের একটা বড় সময় সঙ্গীহীন রাখতে বাধ্য করেছেন। মৃত্যুর সময়ে আয়েশার বয়স ছিল মাত্র ১৬, সাফিয়ার ২১, জুহারিআর ২৬, হাফসার ২৭ বছর বয়স ছিল। এবং তাদেরকে বাকি জীবনটি (৪০ থেকে ৫০ বছর) একা নিঃসঙ্গ কাটাতে বাধ্য করা হয়েছে!!!
 
 সাফিয়া-মায়মুনাকে নবীজী ৬০ বছর বয়সে বিয়ে করেন, অর্থাৎ মাত্র ৩ বছর ছিল তাদের দাম্পত্য জীবন!!!
 
এবং এ সমস্ত অন্যায় সবই করা হয়েছে কোরআনের বরাদ দিয়ে!!
 
 
চারঃ
কারদাওয়ী এক পর্যায়ে ঘোষণা করেছেন,
"বিস্তরিত এ আলোচনায় বোঝা যায় যে, রাসুল সা. এর প্রতিটি বিয়ের পিছনেই ছিল মহত উদ্দেশ্য। রুপ সৌন্দর্য, অর্থ সম্পদ বা যৌন কামনা তাড়িত বিয়ে একটিও ছিলো না"।

এই বাক্য দুটির আগের আলোচনা কয়েকবার পড়ে দেখলাম, মুহম্মদ সা এর কয়েকটি বিয়ের ব্যাপারে একটা গড়পরতা আলোচনা (সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে) করার চেষ্টা হয়েছে। যেমন:
সালমা রা. ধৈর্যের সাথে বৈধব্যকাল অতিবাহিত করায় আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যের পুরস্কার স্বরূপ রাসুল সা. এর স্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন। জুওয়াইয়া রা. কে রাসুল সা. এ উদ্দেশ্যে বিয়ে করেছিলেন যে, বিয়ের পর জুওয়াইয়ার কওমের লোক ইসলাম গ্রহণ করবে। আবু সুফিয়ানের কন্যা উম্মে হাবিবাকে তার কষ্ট লাঘবের জন্য (হাবশায় হিজরতের পর তার স্বামি মুরতাদ হয়েছিল ও মারা গিয়েছিল) রাসুল সা. বিয়ে করেন এবং ইসলামের প্রতি আবু সুফিয়ানের শত্রুতা যাতে কমে সে উদ্দেশ্যও ছিল।
এ আলোচনায় কোনভাবেই কি পরিষ্কার হয় যে, রূপ সৌন্দর্য, অর্থ সম্পদ বা যৌন কামনা তাড়িত বিয়ে একটিও ছিলো না?
 
মুহম্মদ সা এর বিয়ে গুলোর পেছনে রূপ-সৌন্দর্য, বংশ গরিমা, অর্থ-সম্পদ, যৌন কামনাই মূল নিয়ামক এটা আমি দাবী করছি না, তবে ইতিহাস যতখানি দেখি, সেখান থেকে এটুকু বলতে পারি- ওনার স্ত্রীদের কারো কারো ছিল অঢেল অর্থ-সম্পদ, কারো ছিল বংশ গরিমা, অনেকেই ছিল নজরকাড়া সুন্দরী; এবং বিভিন্ন ঘটনায় ওনার যৌন কামনার বিষয়টিও ফুটে ওঠে বৈকি!!
 
খাদিজা ছিলেন আরবের শীর্ষ ধনীর অন্যতম। আয়েশা, হাফসা, মায়মুনা, সালমা, হাবিবা, যয়নব প্রত্যেকেই উচু বংশের। এমনকি যুদ্ধে ধৃত জোহারিআ ও সাফিয়াও ছিলেন স্ব স্ব গোত্রপ্রধানের মেয়ে। আয়েশা নাবালিকা হলেও, একসময় তিনি হন খুবই রূপবতী। যেকারণে ওমর রা তার মেয়েকে সাবধান করে বলেন যে,
"... এবং কখনোই তোমার প্রতিবেশীকে (আয়েশা রা. কে) নবীজীর প্রতিপক্ষ বানিয়ো না, যদিও সে তোমার চেয়ে অধিক সুন্দরী ও মুহম্মদ সা. এর বেশী প্রিয়"। (7)

সালমা, যয়নব, জুহারিআ, সাফিয়া, মারিয়া যে ভীষণ সুন্দরী ছিলেন তা অনেক গুলো হাদিসে পাওয়া যায়, অনেক আলেম-ইতিহাস রচয়িতার বয়ানেও আমরা তার সমর্থন পাই। জুহারিআকে যখন বন্দী অবস্থায় মদীনায় আনা হয়, তখন তিনি মুহম্মদ সা এর সাথে দেখা করার জন মনস্থির করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শুরুতে আয়েশা যখন দেখেন যে জুহারিআ অনেক সুন্দরী, বংশও উচু, তখন আয়েশা জুহারিআর সাথে যাতে মুহম্মদ সা এর সাক্ষাৎ না হয়, সে চেস্টা করেছিলেন! সালমা এমন সুন্দরী ছিলেন যে, সালমার স্বামী মারা যাওয়ার পরে ৪ ইদ্দত কাল পার হতে না হতে একে একে আবু বকর, উমর বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে পাঠান এবং ওনাদের প্রত্যাখ্যান করলে মুহম্মদ সা নিজে প্রস্তাব পাঠান ও বিয়ে করেন। খায়বরের যুদ্ধে সাহাবীদের মধ্যেই মৃত কিনানার স্ত্রীর সৌন্দর্য নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, এবং নবীজী নিজের ভাগে শোকাহত সাফিয়াকে নিয়ে নেন এবং বিয়ে করেন।
 
যৌন কামনার বিষয়টি বুঝা যায়, এতগুলো স্ত্রী থাকার পরেও তার কৃতদাসী বা উপপত্নীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার ঘটনাসমূহ থেকে। রায়হানা ও মারিয়ার কথা ইসলামী স্কলারেরা(8) অস্বীকার করেন না। অনেকেই তাদের উম্মুল মুমিনীন বলেও মানেন। তবে সুন্দরী মারিয়াকে বিয়ে করলেও সেটা তিনি করেছেন, সন্তান ইব্রাহীম জন্মানোর আগে নয়। মারিয়াকে নিয়ে তার স্ত্রীদের সাথে একবার বড় ধরণের মনোমালিন্যও তৈরী হয়েছিল (9), এবং সুরা তাহরীমের ১ম ৫টি আয়াত (10) অবতীর্ণ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছিল!! একসময় নবীজীর যে ৯ স্ত্রী ছিল এবং যাদের কাছে পর্যায়ক্রমে যেতেন- সেই ৯ জনের তালিকায় মারিয়া বা রায়হানা কেউ ছিলেন না।
 
আরেকটি ঘটনাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো- সাওদা যখন বয়স্ক ও যৌন অক্ষম হয়ে যান- তখন তাকে তালাক দিতে চেয়েছিলেন(11)। পরে সাওদা তার পালা আয়েশাকে দিতে চাইলে নবীজী তালাক আর দেননি এবং এ প্রসঙ্গে আয়াত ৪:১২৮ অবতীর্ণ হয়। প্রশ্ন হলো, যৌন কামনা যদি ওনার বিয়ে গুলোর কোন উদ্দেশ্য না হয় তবে কেন সাওদা বয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে তাকে তালাক দিতে চাইবেন? কেন ই বা ৮ স্ত্রীর সাথে ও কিছু উপপত্নী/দাসীর সাথে সম্পর্ক থাকার পরেও এক বুড়িয়ে যাওয়া সাওদার সাথে পালার একটা দিন / রাত কাটাতে পারেন না???
 
তথ্যসূত্র ও টীকাঃ
 
2. Volume 5, Book 58, Number 234 :
Narrated Aisha: The Prophet engaged me when I was a girl of six (years). We went to Medina and stayed at the home of Bani-al-Harith bin Khazraj. Then I got ill and my hair fell down. Later on my hair grew (again) and my mother, Um Ruman, came to me while I was playing in a swing with some of my girl friends. She called me, and I went to her, not knowing what she wanted to do to me. She caught me by the hand and made me stand at the door of the house. I was breathless then, and when my breathing became Allright, she took some water and rubbed my face and head with it. Then she took me into the house. There in the house I saw some Ansari women who said, "Best wishes and Allah's Blessing and a good luck." Then she entrusted me to them and they prepared me (for the marriage). Unexpectedly Allah's Apostle came to me in the forenoon and my mother handed me over to him, and at that time I was a girl of nine years of age.
 
Volume 8, Book 73, Number 151:Narrated 'Aisha: I used to play with the dolls in the presence of the Prophet, and my girl friends also used to play with me. When Allah's Apostle used to enter (my dwelling place) they used to hide themselves, but the Prophet would call them to join and play with me. (The playing with the dolls and similar images is forbidden, but it was allowed for 'Aisha at that time, as she was a little girl, not yet reached the age of puberty.) (Fateh-al-Bari page 143, Vol.13)

Sahih Muslim, Book 8, Number 3309:'A'isha (Allah be pleased with her) reported: Allah's Messenger (may peace be upon him) married me when I was six years old, and I was admitted to his house at the age of nine. She further said: We went to Medina and I had an attack of fever for a month, and my hair had come down to the earlobes. Umm Ruman (my mother) came to me and I was at that time on a swing along with my playmates. She called me loudly and I went to her and I did not know what she had wanted of me. She took hold of my hand and took me to the door, and I was saying: Ha, ha (as if I was gasping), until the agitation of my heart was over. She took me to a house, where had gathered the women of the Ansar. They all blessed me and wished me good luck and said: May you have share in good. She (my mother) entrusted me to them. They washed my head and embellished me and nothing frightened me. Allah's Messenger (, may peace be upon him) came there in the morning, and I was entrusted to him.
Sahih Muslim, Book 8, Number 3310 :'A'isha (Allah be pleased with her) reported: Allah's Apostle (may peace be upon him) married me when I was six years old, and I was admitted to his house when I was nine years old.
 
Sahih Muslim, Book 8, Number 3311:'A'isha (Allah be pleased with her) reported that Allah's Apostle (may peace be upon him) married her when she was seven years old, and he was taken to his house as a bride when she was nine, and her dolls were with her; and when he (the Holy Prophet) died she was eighteen years old.
 
3. Volume 7, Book 62, Number 18:
(http://www.usc.edu/dept/MSA/fundamentals/hadithsunnah/bukhari/062.sbt.html#007.062.018)
Narrated 'Ursa: The Prophet asked Abu Bakr for 'Aisha's hand in marriage. Abu Bakr said "But I am your brother." The Prophet said, "You are my brother in Allah's religion and His Book, but she (Aisha) is lawful for me to marry."

4. Volume 5, Book 59, Number 342:
Narrated 'Abdullah bin 'Umar: Umar bin Al-Khattab said, "When (my daughter) Hafsa bint 'Umar lost her husband Khunais bin Hudhaifa As-Sahrni who was one of the companions of Allah's Apostle and had fought in the battle of Badr and had died in Medina, I met 'Uthman bin 'Affan and suggested that he should marry Hafsa saying, "If you wish, I will marry Hafsa bint 'Umar to you,' on that, he said, 'I will think it over.' I waited for a few days and then he said to me. 'I am of the opinion that I shall not marry at present.' Then I met Abu Bakr and said, 'if you wish, I will marry you, Hafsa bint 'Umar.' He kept quiet and did not give me any reply and I became more angry with him than I was with Uthman . Some days later, Allah's Apostle demanded her hand in marriage and I married her to him. Later on Abu Bakr met me and said, "Perhaps you were angry with me when you offered me Hafsa for marriage and I gave no reply to you?' I said, 'Yes.' Abu Bakr said, 'Nothing prevented me from accepting your offer except that I learnt that Allah's Apostle had referred to the issue of Hafsa and I did not want to disclose the secret of Allah's Apostle , but had he (i.e. the Prophet) given her up I would surely have accepted her."
 
5. শায়খুল হাদীস মওলানা মোঃ আজিযজুল হক অনুদিত সহীহ বোখারী শরীফঃ সপ্তম খন্ড, প্রথম অধ্যায়ের ১৮৪২, ১৮৪৪, ২৪২১ নং হাদীসঃ
 
১৮৪২ নং হাদীসঃ হজরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মদীনা থেকে রওনা দিয়ে খায়বর পৌঁছলাম। আল্লাহ তা'আলা হজরত নবী করিম (স)-কে খায়বরের দূর্গ গুলোর উপর বিজয় দান করেন। এ সময় হজরত নবী করিম (স) এর কাছে ইহুদী নেতা হুয়াই ইবনে আখতাবের কন্যা সফিয়ার সৌন্দর্যের কথা বলা হয়। তিনি ছিলেন সদ্য পরিনীতা। তাঁর স্বামী কেনানা ইবনে রবী খায়বর যুদ্ধে নিহত হয়েছিলেন। হজরত নবী করিম (স) তাঁকে নিজের জন্য মনোনীত করেন এবং সাথে নিয়ে খায়বর থেকে রওয়ানা হন। আমরা যখন সাদ্দুস সাহবা নামক জায়াগায় উপনীত হই, সফিয়া তখন ঋতু থেকে পবিত্রতা লাভ করেন। হজরত নবী করিম (স) এ স্থানে তাঁর সাথে নির্জনবাস করেন।ওয়ালিমা স্বরূপ হজরত নবী করিম (স) - ঘিয়ের মধ্যে খেজুর ভিজিয়ে হাইস নামক এক প্রকার উপাদেয় খাবার প্রস্তুত করে ছোট দস্তরখান সাজিয়ে আমাকে বললেন, তোমার আশেপাশে যারা আছে তাদেরকে জানিয়ে দাও। এটাই ছিল হজরত নবী করিম (স) এর সাথে সফিয়ার বিয়ের ওয়ালিমা। এরপর আমরা মদীনার দিকে রওয়ানা হলাম। আমি নবী করিম (স) কে তাঁর পেছনে হজরত সফিয়ার জন্য একখানা চাদর বিছাতে দেখলাম। তারপর তিনি উটের উপর নিজের হাটুদ্বয় মেলে বসলেন, আর সফিয়া হজরত নবী করিম (স) এর হাটুর উপর পা রেখে সওয়ারীতে পেছনে আরোহন করলেন।
 
১৮৪৪ নং হাদীসঃ হজরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত নবী করিম (স) খায়বর থেকে মদীনায় যেতে পথিমধ্যে তিনদিন অবস্থান করেন। এসময় তিনি সফিয়ার সাথে নির্জনবাস করেন। আমি মুসলমানদেরকে ওয়ালিমার দাওয়াত দিলাম। কিন্তু ওয়ালিমার এ দাওয়াতে রুটি বা গোশতের ব্যবস্থা ছিল না। ব্যবস্থা যা ছিল তা হলো, তিনি বেলাল (রাঃ) কে দস্তরখন বিছাতে বলেন। দস্তরখান বিছানো হলে তিনি সবার জন্য কেজুর, পনির ও ঘৃত পরিবেশন করেন। এ ব্যবস্থা দেখে মুসলমানরা পরষ্পর বলাবলি শুরু করলো, সফিয়া কি উম্মুল মুমেনীন না ক্রীতদাসী? তখন সবাই বলল, যদি হজরত নবী করিম (স) তাকে পর্দা করান, তবে তিনি উম্মুল মুমিনীন, অন্যথায় বুঝতে হবে তিনি ক্রীতদাসী। অত:পর হজরত নবী করিম (স) রওয়ানা হওয়ার সময় তাঁর (সফিয়ার) জন্য নিজের পেছনে বসার জায়গা করে পর্দা টানিয়ে আড়াল করে দেন।
 
২৪২১ নং হাদীসঃ হজরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স) সফিয়াকে আযাদ করে বিয়ে করলেন এবং আযাদ করাই তাঁর মোহরানা ধার্য হলো। তাঁর বিয়েতে হাইস দ্বারা ওয়ালিমা করা হয়।
 
 
7. সহীহ বুখারী শরীফঃ ভলিউম ৩, বই ৪৩, হাদীস ৬৪৮:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, যে দুইজন নারী সম্পর্কে কোরআন পাকে (আয়াত ৬৬:৪) বলা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে হযরত ওমর রা. কে প্রশ্ন করার ইচ্ছা বেশ কিছুকাল পর্যন্ত আমার মনে ছিল। অবশেষে একবার তিনি হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে আমিও সফরসঙ্গী হয়ে গেলাম। (হজ্জ থেকে ফেরার পথে) ওমর একপাশে গেলে (প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে), আমিও (ওযুর)পানি নিয়ে তার সাথে যাই। যখন তিনি ফিরলেন, আমি তার হাতে পানি ঢালছিলাম এবং জিজ্ঞেস করলাম, "ওহ বিশ্বাসীদের প্রধান! নবী করিম সা. এর কোন দুজন নারীর ব্যাপারে কোরআনের এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছেঃ যদি তোমরা দুজন তওবা করো (৬৬:৪)।"

 

তখন ওমর রা. বললেন, "আমি এবং বনী উমাইয়া বিন জাহিদ গোত্রের আমার এক আনসারী প্রতিবেশী মদীনার আওয়ালীতে বাস করতাম ও পর্যায়ক্রমে রাসুলুল্লাহ সা. কাছে যেতাম। তিনি একদিন যেতেন আর আমি অন্যদিন। যেদিন আমি যেতাম রাসুলুল্লাহ সা. এর সেদিনকার আদেশ-নির্দেশাবলী সমেত ঘটনাসমূহ তাকে (প্রতিবেশীকে) বলতাম এবং যেদিন তিনি যেতেন, তিনিও আমার কাছে অনুরূপ করতেন। আমরা, কোরায়েশ পুরুষরা, যখন মক্কায় বাস করতাম তখন নারীদের উপর অধিক কর্তৃত্ব ভোগ করতাম, কিন্তু আমরা যখন মদীনায় আসলাম তখন লক্ষ করলাম যে, আনসার নারীরা পুরুষদের উপর অধিক কর্তৃত্ব ভোগ করে। ফলে, আমাদের নারীরা আনসার নারীদের অভ্যাস গ্রহণ করতে শুরু করে। একদিন আমি আমার স্ত্রীর প্রতি চিৎকার করলে আমার স্ত্রীও আমার সাথে মুখে মুখে তর্ক করলেন ও পাই পাই বুঝিয়ে দিলেন। আমি এটা অপছন্দ করলে তিনি বললেন, "আপনাকে প্রতি উত্তর দিলে সেটাকে আপনি খারাপভাবে নিচ্ছেন কেন? আল্লাহর কসম! নবী করিম সা. এর স্ত্রীরাও তাঁর সাথে মুখে মুখে তর্ক করেছেন এবং স্ত্রীদের কেউ কেউ দিন থেকে রাত অবধি তাঁর সাথে কথা পর্যন্ত বলেননি"। আমার স্ত্রী যেটি বললো আমাকে ভীত করলো এবং আমি জিজ্ঞেস করলাম, "তাঁদের মধ্যে যেই এমন করে, সে-ই ভয়ানক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন"। আমি পোশাক পরিধান করে হাফসার কাছে গেলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি দিন থেকে রাত অবধি রাসুলুল্লাহ সা. কে রাগান্বিত রেখেছ?" সে হ্যাঁ বোধক জবাব দিল। আমি বললাম, "তুমি বিধ্বস্ত পরাজিত নারী! তুমি কি আল্লাহর রাসুলকে রাগান্বিত করে আল্লাহর ক্রোধের কারণ হতে ভীত হও নাই? এভাবে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে! আল্লাহর রাসুলকে বেশী কথা বলো না, কোন অবস্থাতেই তাঁর সাথে মুখে মুখে তর্ক করো না এবং তাঁকে অসন্তুষ্ট করো না। তোমার যা খুশী দরকার আমার কাছে চাও এবং কখনোই তোমার প্রতিবেশীকে (আয়েশা রা. কে) নবীজীর প্রতিপক্ষ বানিয়ো না, যদিও সে তোমার চেয়ে অধিক সুন্দরী ও মুহম্মদ সা. এর বেশী প্রিয়"।

 

সে সময় গুজব ছিল যে, ঘাসানরা (শ্যাম দেশের একটি গোত্র) আমাদের আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে ঘোড়া প্রস্তুত করছে। এক রাতে আমার আনসার প্রতিবেশী (তাঁর পালায় রাসুলুল্লাহ সা. এর বাড়ি থেকে ফিরে) খুব স্বন্ত্রস্তভাবে আমার দরজায় কড়া নাড়তে লাগলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কি হয়েছে? ঘাসানেরা কি এসেছে?" তিনি বললেন, "তারচেয়েও খারাপ, আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ! রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন"। আমি বললাম, হাফসা বিধ্বস্ত হয়েছে। আমি এমনটি আগেই ভেবেছিলাম। আমি পোশাক পরিধান করে রাসুলুল্লাহ সা. এর সাথে ফজরের নামাজ আদায় করলাম। এরপরে তিনি উপরের কামরায় চলে গেলেন। আমি হাফসার কাছে গিয়ে তাকে ক্রন্দনরত পেলাম। আমি তাকে বললাম, "কেন কাঁদছ? আমি কি তোমাকে আগেই সাবধান করিনি?" আমি জিজ্ঞেস করলাম, "রাসুলুল্লাহ সা. কি তোমাদের সকলকে তালাক দিয়েছেন?" সে বললো, "আমি জানি না। তিনি সেখানে উপরের ঘরে আছেন"। আমি বের হলাম এবং কিছু মানুষের জটলা দেখতে পেলাম যাদের কেউ কেউ কাঁদছিল। আমি তাদের সাথে কিছুক্ষণ বসলাম, কিন্তু আমি পরিস্থিতি সহ্য করতে পারছিলাম না। তাই আমি উপরে গেলাম এবং নবীজীর এক কৃষ্ণাজ্ঞ দাসকে বললাম, "তুমি কি ওমরের জন্য রাসুলুল্লাহ সা এর অনুমতি প্রার্থনা করবে?" সে ভেতরে গেল এবং এসে বললো, "আমি আপনার কথা তাঁর কাছে বলেছি কিন্তু তিনি কোন জবাব দেন নি"। আমি জটলার কাছে ফিরে এসে বসলাম, কিন্তু পরিস্থিতি সহ্য করতে না পেরে আবার উপরে দাসের নিকট গিয়ে বললাম, "তুমি কি ওমরের জন্য নবীজীর অনুমতি প্রার্থনা করতে পার?"সে গেল এবং ফিরে এসে একই কথা বললো। যখন আমি ফিরে আসছি, তখন দাস বললো, "রাসুলুল্লাহ সা. আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন"। সুতরাং আমি ভিতরে রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে গেলাম এবং তাকে একটি মাদুরে শয়নরত অবস্থায় পেলাম। আমি বললাম, "আপনি কি আপনার স্ত্রীদের তালাক দিয়েছেন?" তিনি আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন এবং না বোধক উত্তর দিলেন। আমি দাঁড়িয়ে বলতে লাগলাম, "আপনি কি আমার কথা শুনবেন? হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কোরায়েশরা নারীদের উপর অধিক কর্তৃত্ব পেতাম, এবং এখানে আমরা যাদের কাছে এসেছি তাদের নারীরা তাদের উপর অধিক কর্তৃত্ব ভোগ করে"।

 

এরপরে আমি পুরো ঘটনা তাঁকে বলি (তাঁর স্ত্রী সম্পর্কে)। এতে তিনি হাসলেন। আমি তখন বললাম, "আমি হাফসার নিকট গিয়েছিলাম এবং তাকে বলেছি: তোমার প্রতিবেশীকে (আয়েশা রা. কে) নবীজীর প্রতিপক্ষ বানিয়ো না, যদিও সে তোমার চেয়ে অধিক সুন্দরী ও মুহম্মদ সা. এর বেশী প্রিয়"। এতে নবীজী আবার হাসলেন। আমি বসলাম এবং বললাম, "আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন যেন আপনার অনুসারীরা অনেক উন্নতি করতে পারে, যেহেতু পারস্যীয়রা ও বাইজেন্টাইনরা আল্লাহকে না মেনেও কতই না উন্নতি করেছে, তাদের কতই না সম্পদ"। রাসুলুল্লাহ সা. উঠে বসলেন এবং বললেন, "ওহ ইবনে আল খাত্তাব! তোমার কি কোন সন্দেহ আছে (যে এস্থান দুনিয়ার মধ্যে সেরা)? মানুষ তার ভালো কাজেরই কেবল প্রতিফল পায়"। আমি তাঁকে আল্লাহর কাছে আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা বললাম।রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর স্ত্রীদের কাছে যাননি কারণ হাফসা গোপন কথা আয়েশার নিকট ফাঁস করে দিয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন যে, তিনি একমাস তাঁর স্ত্রীদের কাছে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কেননা তিনি তাদের উপর রাগান্বিত হয়েছেন যখন আল্লাহ তাকে সাবধান করে দেন (মারিয়ার প্রতি আকৃষ্ট না হওয়ার শপথ করার জন্য)। যখন ২৯ দিন অতিবাহিত হলো, তখন তিনি সর্বপ্রথম আয়েশার নিকট গিয়েছিলেন। আয়েশা বললেন, "আপনি শপথ করেছিলেন যে, একমাস আমাদের কাছে আসবেন না, আজ কেবল মাত্র ২৯ দিন অতিবাহিত হয়েছে। আমি এক এক করে দিন গুনে রেখেছি"। মুহম্মদ সা. জবাবে বললেন, "২৯ দিনেও মাস হয়"। সে মাস ২৯ দিনে ছিল। রাসুলুল্লাহ সা. আয়েশা রা. কে বললেন, "আমি তোমাকে কিছু বলতে যাচ্ছি, কিন্তু জবাব দেয়ার জন্য তোমার পিতামাতার সাথে পরামর্শ করার আগ পর্যন্ত তাড়ার কিছু নেই। আয়েশা রা. জানতেন যে, তাঁর পিতামাতা নবীজীর থেকে পৃথক হওয়ার অনুমতি দিবেন না। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন যে, আল্লাহ বলেছেনঃহে নবী! তোমার স্ত্রীগণকে বলো,- "তোমরা যদি দুনিয়ার জীবনটা ও তার শোভা-সৌন্দর্য কামনা করো, তবে এসো আমি তোমাদের ভোগ্যবস্তুর ব্যবস্থা করে দিব এবং তোমাদের বিদায় করে দিব সৌজন্যময় বিদায়দানে"। (সুরা আহযাব, আয়াত ২৮) আয়েশা বললেন, "আমি কি আমার পিতামাতার সাথে পরামর্শ করতে পারি?" পরে আয়েশা নবীজীকে বললেন, "আমি অবশ্যই আল্লাহকে, তাঁর রাসুলকে এবং এই স্থানকে অধিকতর পছন্দ করি"।
এরপরে রাসুলুল্লাহ সা. একে একে অন্য স্ত্রীদের কাছে গিয়েও এই আহবান জানালে তাঁরাও আয়েশার অনুরূপ জবাব দেন।

একই ধরণের হাদীস পাওয়া যায় মুসলিম শরীফের ৯/৩৫১১ এ এবং বোখারী শরীফের ৭/৬২/১১৯ এ।
 
8. ইসলামী ফতোয়া সাইট (আরবী সাইট http://www.islamweb.net/ver2/Fatwa/ShowFatwa.php?lang=A&Option=FatwaId&Id=20780) থেকে দেখিঃ
(অনুবাদ করেছেন মুফতি আল ফাদী)
Fatwa # 20780
Fatwa Title: His wives "Alayhi wa-Salat wa-Salam" who were slaves
Fatwa Date: 04 Jumady al-Thania 1423
Question
There are two slave women that the messenger (SAW) married, who are they?
Fatwa
Thanks be to Allah and prayer and peace be upon the messenger of Allah and on his family and companions. As to this:If the questioner meant that Allah’s messenger (SAW) married two slave women while they were still slaves? This cannot be of the messenger of Allah (SAW), and this is not permitted in Islam except to those who cannot marry a free woman and fears immorality.And if he meant that he [Muhammad] married those women after they were freed from slavery? Hence Juwayrah bint al-Harith al-Mustaliqia was from those who were enslaved (captured) from Bani al-Mustaliq (the tribe of Mustaliq), and she was the daughter of their leader, the prophet (SAW) freed her and married her. Same with Safiyah bint Huyay bin Akhtab who was one of the slaves of Khaybar, and the prophet (SAW) freed her and married her.But if he meant the slaves that the messenger used to enjoy (ya ta sarra behina), meaning sleeping with them by virtue of their being his right hand possession? It was said four: Mariyah al -Qibtiyah, and Rayhanah from Bani Quraytha (the tribe of Quraytha), and a third slave woman whom he slept with during her slavery, and a fourth one who was given to him by Zaynab bint Jahsh.

9. টীকা 7 দ্রষ্টব্য।
 
10. সুরা আত তাহরীম (নিষিদ্ধকরণ)-
 
আয়াত ১: হে নবী, কেন তুমি নিষিদ্ধ করেছ, যা আল্লাহ তোমার জন্য বৈধ করেছেন? তুমি চাইছ তোমার স্ত্রীদের খুশী করতে? আর আল্লাহ পরিত্রাণকারী ও অফুরন্ত ফলদাতা।
 
আয়াত ২: আল্লাহ তোমাদের জন্য বিধান দিয়ে রেখেছেন তোমাদের শপথগুলো থেকে মুক্তির উপায়; আর আল্লাহ তোমাদের রক্ষাকারী বন্ধু, আর তিনিই সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী।
 
আয়াত ৩: আর স্মরণ করো! নবী তাঁর স্ত্রীদের কোন একজনের কাছে গোপনে একটি সংবাদ দিয়েছিলেন, - কিন্তু তিনি যখন তা বলে দিলেন, এবং আল্লাহ তার কাছে এটি জানিয়ে দিয়েছিলেন; তখন তিনি তাকে কতকটা জানিয়েছিলেন এবং চেপে গিয়েছিলেন অন্য কতকটা। তিনি যখন তাকে তা জানিয়েছিলেন তখন তিনি বললনে, - "কে আপনাকে এ কথা বললেন?" তিনি বলেছিলেন, "আমাকে সংবাদ দিয়েছেন সেই সর্বজ্ঞাতা ও চির- ওয়াকিফহাল"।
 
আয়াত ৪: যদি তোমরা উভয়ে আল্লাহর দিকে ফেরো, কেননা তোমাদের হৃদয় ইতোপূর্বেই ঝোঁকে গিয়েছে। কিন্তু যদি তোমরা উভয়ে তার বিরুদ্ধে পৃষ্ঠপোষকতা করো, তাহলে আল্লাহ,- তিনিই তাঁর রক্ষাকারী বন্ধু, আর জিব্রীল ও পুণ্যবান মুমিনগণ উপরন্তু ফেরেস্তারাও তাঁর পৃষ্ঠপোষক।
 
আয়াত ৫: হতে পারে তাঁর প্রভু, যদি তিনি তোমাদের তালাক দিয়ে দেন, তবে তিনি তাঁকে বদলে দিবেন তোমাদের চাইতেও উৎকৃষ্ট স্ত্রীদের- আত্মসমর্পিতা, বিশ্বাসিনী, বিনয়াবনতা, অনুতাপকারিনী, উপাসনাকারিনী, রোযাপালনকারিনী, স্বামিঘরকারিনী ও কুমারী।(অনুবাদঃ ড. জহুরুল হক)
 
11. ইবনে কাথিরের তাফসির দ্রষ্টব্য ( http://www.tafsir.com/default.asp?sid=4&tid=12406)
.....Abu Dawud At-Tayalisi recorded that Ibn `Abbas said,
"Sawdah feared that the Messenger of Allah might divorce her and she said, `O Messenger of Allah! Do not divorce me; give my day to `A'ishah.' And he did, and later on Allah sent down,

[وَإِنِ امْرَأَةٌ خَـفَتْ مِن بَعْلِهَا نُشُوزاً أَوْ إِعْرَاضاً فَلاَ جُنَاْحَ عَلَيْهِمَآ]
(And if a woman fears cruelty or desertion on her husband's part, there is no sin on them both) Ibn `Abbas said, "Whatever (legal agreement) the spouses mutually agree to is allowed.''. At-Tirmidhi recorded it and said, "Hasan Gharib''. In the Two Sahihs, it is recorded that `A'ishah said that when Sawdah bint Zam`ah became old, she forfeited her day to `A'ishah, and the Prophet used to spend Sawdah's night with `A'ishah. There is a similar narration also collected by Al-Bukhari. Al-Bukhari also recorded that `A'ishah commented;

[وَإِنِ امْرَأَةٌ خَـفَتْ مِن بَعْلِهَا نُشُوزاً أَوْ إِعْرَاضاً]
(And if a woman fears cruelty or desertion on her husband's part), that it refers to, "A man who is married to an old woman, and he does not desire her and wants to divorce her. So she says, `I forfeit my right on you.' So this Ayah was revealed.''Allah said,

[وَالصُّلْحُ خَيْرٌ]
(And making peace is better). `Ali bin Abi Talhah related that Ibn `Abbas said that
the Ayah refers to, "When the husband gives his wife the choice between staying with him or leaving him, as this is better than the husband preferring other wives to her.'' However, the apparent wording of the Ayah refers to the settlement where the wife forfeits some of the rights she has over her husband, with the husband agreeing to this concession, and that this settlement is better than divorce. For instance,
the Prophet kept Sawdah bint Zam`ah as his wife after she offered to forfeit her day for `A'ishah. By keeping her among his wives, his Ummah may follow this kind of settlement. Since settlement and peace are better with Allah than parting, .......

২টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

post lekher age apnar chinta kora dokar chilo je apni ki bishoi e liktesen.ALLAH ke voy korun.

Unknown বলেছেন...

এই কুত্তার বাচ্চা! বুঝে শুনে পোস্ট দিস...! Fuck u!